কূটনৈতিক টানাপড়েন: চীন ছাড়লেন অস্ট্রেলিয়ান দু’সাংবাদিক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ‘কূটনৈতিক এক অচলাবস্থা’ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চীন ছেড়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান দু’জন সাংবাদিক। এর নেপথ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থাকে দায়ী করেছে সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যম। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, যে দু’জন অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক চীন ছেড়েছেন তারা হলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) বিল বার্টলস এবং অস্ট্রেলিয়ান ফিনান্সিয়াল রিভিউয়ের (এএফআর) মাইক স্মিথ। তারা দু’জনেই মঙ্গলবার সিডনি পৌঁছেছেন। চীন ত্যাগ করার আগে তাদের দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এবিসি তার রিপোর্টে বলেছে, তাদের সাংবাদিক বিল বার্টলসকে চীনে অবস্থান বা সেখান থেকে রিপোর্ট করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কে অবনতি হয়েছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের সমর্থন, সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে চীনে কনস্যুলার কর্মকর্তারা- এ কথা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিজ পাইনে।
তিনি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাংবাদিকদের ভালমন্দ নিশিচত করতে এবং তাদের অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসা নিশ্চিত করতে বেইজিংয়ে আমাদের দূতাবাস ও সাংহাইয়ে কনস্যুলেট জেনারেল যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বার্তা সংস্থা এএফআর তার রিপোর্টে বলেছে, গত মাস থেকে আটক করা হয়েছে চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় কাজ করা একজন অস্ট্রেলিয় সাংবাদিক চেং লাই’কে। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
এবিসি রিপোর্ট করেছে যে, সাংবাদিক বিল বার্টলসকে অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকরা এবং এবিসির ম্যানেজমেন্ট গত সপ্তাহে পরামর্শ দিয়েছেন চীন ত্যাগ করতে। এ জন্য তিনি ফ্লাইট বুকিং দিয়েছিলেন। তার বেইজিং ত্যাগ করার কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু তার আগে বুধবার রাতে পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে যায়। ওই রাতে চীনা পুুলিশের সাতজন কর্মকর্তা এই সাংবাদিকের বাসায় তল্লাশি চালায়। তখন তিনি সেখানে বন্ধুদের নিয়ে বিদায়ী পানীয়ের আসর বসিয়েছিলেন। এ সময় তাকে জানিয়ে দেয়া হয় তিনি চীন ত্যাগ করতে পারবেন না। জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে তাকে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সঙ্গে সঙ্গে বার্টলেস যোগাযোগ করেন অস্ট্রেলিয়ান কনস্যুলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ অবস্থায় কনস্যুলার কর্মকর্তারা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে। সেখানেই তিনি পরের চারদিন অতিবাহিত করেন। এরই মধ্যে চীনে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান রাষ্ট্রদূত গ্রাহাম ফ্লেচারের উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চীনা পুলিশ।
এএফআরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অন্যদিকে সাংবাদিক স্মিথ অবস্থান করছিলেন সাংহাইয়ে। তার বাসভবনেও পুলিশ হানা দেয়। এর ফলে তিনিও সেখানে অস্ট্রেলিয়ান কনস্যুলেটে চলে যেতে বাধ্য হন। তাদের দু’জনকেই মিস লাই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এক পর্যায়ে তাদেরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে এমন শর্তের বিনিময়ে চীন ত্যাগ করতে অনুমতি দেয়া হয়।
সিডনি পৌঁছে বিল বার্টলস বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে চীন ত্যাগ করা অত্যন্ত হতাশার। প্রকৃত আইন শৃংখলার অধীনে দেশে ফেরায় স্বস্তি থাকে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা এক ঘূর্ণাবর্ত। এটা মোটেও ভাল কোনো অভিজ্ঞতা নয়। এএফআরের সম্পাদক মাইকেল স্টাচবারি এবং পল বেইলে বলেছেন, দু’জন সাংবাদিকই নিরাপদে দেশে ফিরতে পেরেছেন বলে তারা সন্তুষ্ট। এই দু’সাংবাদিক তাদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। বিষয়টি যেমন নিন্দনীয়, তেমনি হতাশারও। এটা চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সহযোগিতামুলক সম্পর্কের স্বার্থ রক্ষা করে না।
চীনে অবস্থান করে অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ার জন্য কাজ করছিলেন বিল বার্টলস এবং মাইক স্মিথ। ১৯৭০ এর দশকের মধ্যভাগের পর প্রথমবারের মতো চীন থেকে অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের বের করে আনা হলো। এতে প্রমাণ হয়েছে যে, চীনে অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের আর কোনো অনুমোদন নেই।
চীন শুধু অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারই নয়। একই সঙ্গে তাদের কয়লা ও লোহার আকরিকের সবচেয়ে বড় ক্রেতাও। বেইজিং ও ক্যানবেরার মধ্যে যখন উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছেই তখন, চীনে সাংবাদিকদের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে এবিসির নিউজ ডিরেক্টর গাভিন মোরিস বলেছেন, চীনের কাহিনী, তাদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় এবং বিশ্বে তাদের ভূমিকা সব অস্ট্রেলিয়ানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বর্পূ। তা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পশ্চিমা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে চীনে যে দমনপীড়ন চলছে, তাতে অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের আবার সেখানে অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি সুদূরপরাহত।