ইয়াবা অপ্রতিরোধ্য কেন ?

0

কোনভাবেই মরণনেশা ইয়াবার চোরাকারবার বন্ধ করতে পারছে না সরকার। দেশে ভয়ংকর মাদক ইয়াবার ছোবল ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। ইয়াবা কারবারিদের নেটওয়ার্ক ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে যাচ্ছে এই মারণনেশা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু যুবক বা তরুণরাই নয়, বহুসংখ্যক কিশোরও এখন এই মরণনেশায় আসক্ত। তার অর্থ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্রমেই আত্মঘাতী হচ্ছে বা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে। শুধু তা-ই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও পড়ছে এর মারাত্মক প্রভাব। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে। আর তা করতে গিয়ে মাদককারবারিরা হুন্ডির পাশাপাশি এমন অনেক কৌশল অবলম্বন করছে, যা শুধু অর্থনীতিরই ক্ষতি করছে না, দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তা সত্ত্বেও মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের উদ্যোগ খুবই দুর্বল।
মাদকের বিস্তার রোধে কয়েক বছর ধরেই সাঁড়াশি অভিযান চলছে। কিন্তু গণমাধ্যমে আসা খবরাখবর থেকে জানা যায়, মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা ক্রমেই বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। অভিযোগ আছে, ইয়াবার বিস্তার রোধের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যও ইয়াবার কারবারে জড়িয়ে যাচ্ছে। পত্রিকায় অতি সম্প্রতি প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ মাসে বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে তিন কোটি ৫৩ লাখ ২৫ হাজার ৬১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে আসা মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থারও একই মত। সেই হিসাবে দেশে এই সময়ে মোট ইয়াবা এসেছে ৩০ কোটির বেশি। জানা গেছে, মিয়ানমারে প্রতি পিস ইয়াবার দাম পড়ে গড়ে ৩০ টাকা। তাহলে এই সময়ে মিয়ানমারে ৯০০ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ কিভাবে পাচার করা হয়েছে? জানা যায়, বাংলাদেশের বড় কারবারিরা এসব ইয়াবার মূল্য পরিশোধের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে দুবাই ও মালয়েশিয়াকে। অর্থ পরিশোধ করা হয় মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। এ ছাড়া ওষুধ, স্বর্ণালংকার, বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়েও নিয়ে আসা হয় এই মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে এক লাখ ৩২ হাজার ২৮৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিল সব সংস্থা মিলে। এরপর প্রতিবছরই বাড়ছে উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা। ২০১৯ সালে উদ্ধার হয়েছে তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার ৩২৮ পিস।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে, দেশের তরুণসমাজকে বাঁচাতে হলে এবং দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে এই মারণনেশা ইয়াবার বিস্তাররোধ করতেই হবে। জানা যায়, রাজনীতিবিদ, প্রভাবশালী, ব্যবসায়ীসহ অনেকেরই সম্পৃক্ততা রয়েছে এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে। কাজেই মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে অর্থপাচার বন্ধ করাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে।