করোনায় থাইল্যান্ডের চিনি রফতানির লক্ষ্যপূরণ নিয়ে আশঙ্কা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ থাইল্যান্ডের রফতানি পণ্যগুলোর অন্যতম চিনি। নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে দেশটির চিনি রফতানি খাতে রীতিমতো ধস নেমেছে। বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-পঞ্চমাংশ কমেছে। এর মধ্যে শুধু জুলাইয়ে দেশটি থেকে চিনি রফতানি কমেছে এক-চতুর্থাংশ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে কমতে থাকলে চলতি বছর শেষে থাইল্যান্ড থেকে চিনি রফতানিতে প্রাক্কলিত দশমিক ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হতে পারে। খবর রয়টার্স ও এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
চিনি উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় থাইল্যান্ডের অবস্থান চতুর্থ। তবে খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের তালিকায় দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। থাই সুগার মিলার্স করপোরেশনের (টিএসএমসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই সময়ে থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২৭ লাখ টন চিনি রফতানি হয়েছে। ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি এক-পঞ্চমাংশ বা ২০ শতাংশ কমেছে। গত বছরের জানুয়ারি-জুলাই সময়ে থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টন চিনি রফতানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমেছে ৬ লাখ ৬০ হাজার টন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে থাইল্যান্ডের চিনি রফতানি খাতে মন্দা ভাব নেমে আসে। বছরের শুরু থেকেই কমতে থাকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি। দিন যত গড়িয়েছে থাইল্যান্ডের চিনি রফতানিতে বিদ্যমান মন্দা ভাব ততই জোরালো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে থাইল্যান্ডের চিনি রফতানি খাত।
টিএসএমসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি রফতানি কমেছে এক-চতুর্থাংশ বা ২৪ শতাংশ। এ সময় দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ২৮ হাজার ১৭৪ টন অপরিশোধিত চিনি রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে থাইল্যান্ড থেকে মোট ২ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ টন অপরিশোধিত চিনি রফতানি হয়েছিল।
তবে অপরিশোধিত চিনি রফতানি বাড়লেও গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ড থেকে পরিশোধিত চিনি রফতানিতে বড় পতন দেখা গেছে। এ সময় দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৫০৫ টন পরিশোধিত চিনি রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে থাইল্যান্ড থেকে মোট ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৮ টন পরিশোধিত চিনি রফতানি হয়েছিল। মূলত পরিশোধিত চিনি রফতানিতে এ ধস গত মাসে দেশটি থেকে সামগ্রিক চিনি রফতানিতে মন্দা ভাবের জন্ম দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে টিএসএমসি।
থাইল্যান্ড থেকে রফতানি হওয়া চিনির সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইন্দোনেশিয়া। প্রতি বছর ৭০-৮০ শতাংশ রফতানিযোগ্য থাই অপরিশোধিত চিনির রফতানি গন্তব্য থাকে ইন্দোনেশিয়া। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইন্দোনেশিয়ায় সব মিলিয়ে ১৯ লাখ ৪০ হাজার টন চিনি (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে) রফতানি করেছে থাইল্যান্ড।
এদিকে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের পক্ষ থেকে আগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, চলতি বছর থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার টন চিনি রফতানি হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। এর আগের বছর দেশটি থেকে মোট ১ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার টন চিনি রফতানি হয়েছিল। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পূর্বাভাসে করোনাকালে রফতানি পরিস্থিতি যুক্ত করা হয়নি। সাত মাসে সাকল্যে ৩৩ লাখ টনের কিছু বেশি চিনি রফতানি হয়েছে। খাদ্যপণ্যটির রফতানি পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বছরের বাকি পাঁচ মাসে (আগস্ট-ডিসেম্বর) থাইল্যান্ড থেকে চিনি রফতানিতে প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে। এমনকি বছর শেষে থাইল্যান্ড থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।