কলকাতার নিলামে বাড়তে শুরু করেছে চায়ের দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাকালে গভীর সংকটে পড়েছে ভারতের চা শিল্প। লকডাউন চলাকালে একদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় শ্রমিক সংকটে উৎপাদন কমে আসা, অন্যদিকে পরিবহন সংকটে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া—এ দুইয়ের জের ধরে ভারতীয় চা শিল্পের চ্যালেঞ্জ প্রকট রূপ নিয়েছে। প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। কলকাতা, গৌহাটিসহ উত্তর ভারতীয় চা নিলাম কেন্দ্রগুলোয় পানীয় পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চা শিল্পের এ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকতে পারে। ফলে সহসাই কমবে না ভারতের বাজারে চায়ের দাম। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও বিজনেস লাইন।
টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার নিলাম ঘরে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত মৌসুমের ৩৩তম নিলামে সিটিসি ও ডাস্ট গ্রেডের চায়ের গড় দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৩১৩ দশমিক ৫৮ রুপিতে (ভারতীয় মুদ্রা)। আগের বছরের একই সময়ের নিলামের তুলনায় পানীয় পণ্যটির গড় দাম কেজিতে প্রায় ১৩৯ দশমিক ৩৩ রুপি বেড়েছে।
এ বিষয়ে কলকাতা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিটিএ) সেক্রেটারি জে কল্যাণসুন্দরম বলেন, চলতি বছরের নিলামগুলোয় চায়ের সরবরাহ অনেকটাই কমে এসেছে। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৮ লাখ কেজি চা নিলামে বিক্রির জন্য সরবরাহ হয়েছে। আগের মৌসুমের একই সময়ে সরবরাহ হয়েছিল ৩২ লাখ কেজি চা। বাগান মালিকরা বলছেন, লকডাউনে উৎপাদন কমায় তাদের পক্ষে চায়ের সরবরাহ কমিয়ে আনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এর প্রভাব পড়ছে পানীয় পণ্যটির দামে। সর্বশেষ নিলামে চায়ের গড় দাম কেজিপ্রতি ৩১৩ রুপি ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আগের মৌসুমের একই নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ১৭৪ দশমিক ২৫ রুপি।
টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার এক নোটে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জের ধরে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়সহ ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত চা উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমেছে। গত বছরের একই সময়ে এসব রাজ্যে সব মিলিয়ে ৫২ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময়ে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কমে ৩৮ কোটি কেজিতে নেমে এসেছে। সেই হিসাবে করোনার কারণে এবার এসব রাজ্যে চায়ের সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ কোটি ৮০ লাখ কেজি কমেছে।
আসাম, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় মার্চ-এপ্রিল মাসে মৌসুমের প্রথম পর্যায়ের (ফার্স্ট ফ্ল্যাশ) চা পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। মান তুলনামূলক ভালো হওয়ায় এ সময় সংগ্রহ করা চায়ের চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি থাকে। চলতি বছর মার্চের শেষ নাগাদ ভারতে লকডাউন শুরু হয়েছিল। ওই সময় বাধাগ্রস্ত হয় প্রথম পর্যায়ের চা পাতা সংগ্রহের কাজ। ফলে মৌসুমের প্রথম পর্যায়ের চা উৎপাদন কমে আসে প্রায় ৬৫ শতাংশ। এখনো ভারতে করোনা মহামারী পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এর জের ধরে মৌসুমের দ্বিতীয় পর্যায়ের চা উৎপাদন ও সংগ্রহ বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা খাতসংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিবেক গোয়েনকা বলেন, করোনা মহামারীর প্রভাবে চলতি মাসেও ভারতে চা উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের
তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমতে পারে। এর পর থেকে বছরের বাকি সময়ে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন বাড়লেও আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।
করোনাকালে এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ভারত থেকে চা রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। গত বছর ভারতীয় রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ২৪ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা রফতানি করেছেন। করোনা সংকটের জের ধরে দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পানীয় পণ্যটির রফতানি কমে ২১ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার কেজিতে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন।