অনলাইন পাঠদান সীমিত ও নানা জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হয়ে পড়েছে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, সীমিত পরিসরে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম ও নানা জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং বই বিমুখ হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এ অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর সংক্রমনের বিস্তার ঠেকাতে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক ধারাবাহিক কার্যক্রম থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। যে কারণে অনেকে বই বিমুখর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসাতে প্রথমে যশোর জেলা শিক্ষা অফিস সিটি ক্যাবলের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালু করে। শিক্ষা অফিস পাঠদানের ভিডিও ধারণ করে সরাসরি সিটি ক্যাবলের মাধ্যমে টেলিভিশনে সম্প্রচার করে। কিন্ত সেখানে সব শ্রেণীর সব বিষয়ের পাঠদান করা হয় না। অংক, ইংরেজিসহ সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। এই কাস অনলাইনে কেন্দ্রিক হওয়ায় শিক্ষক শুধুমাত্র কাস নিয়েই যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের কোন প্রশ্ন করা বা উত্তর জানার সুযোগ থাকে না। ফলে ওই শিক্ষক যা বলে যান তাতেই শিক্ষার্থীকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কোন বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানা বোঝার বিষয়টি অধরায় থেকে যায়।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা এ থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা বেশি না হলেও গ্রামাঞ্চলে প্রকট। সেখঅনে সিটি ক্যাবলের সুবিধাও কম। ফলে শহরের বাইরের ওয়ান লাইনে জেলা শিক্ষা অফিসের পাঠদান কার্যক্রম শুরুর পর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অতি সম্প্রতি যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড পাঠদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে। সেখানে জেলা উপজেলা ও পৌরসভা কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই কার্যক্রমের আওতায় আসে। বঞ্চিত হয় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এ কার্যক্রম চালানো হয় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না। কারণ সেখানেও কোন প্রশ্ন উত্তর পর্ব নেই। শিক্ষক নিজের মত কাস নেন। এক্ষেত্রে উচ্চ মূল্যের ইন্টারনেট ক্রয় বা দুর্বল নেটওয়ার্ক এই কার্যক্রমে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা তা হলো স্মার্ট ফোনের অভাব। এটি ছাড়া ওয়ান লাইন পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নে য়ার কোন সুযোগই নেই। এসব কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে না। আবার অবশ্য ফেসবুক লাইভ পাঠদান কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের একটি সুযোগ আছে। সেটি হচ্ছে একজন শিক্ষক তার পাঠদানের ভিডিও স্কুলের আইডিতে আপলোড করবেন। সেখান থেকে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভিডিওটা নামিয়ে দেখতে পারবেন। সব মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ও অনলাইন কার্যক্রম জটিলতা মুক্ত করে সম্প্রসারিত না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং বইবিমুখ হয়ে পড়ছে। তাদের পড়ার টেবিলে ফেরানোর জন্যে নান্ াউদ্যোগ নেয়া হলেও তেমন কাজে আসছে না। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুল খালেক বলেন, আমি যতদূর জানি অনেক শিক্ষার্থী এই পাঠদানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। কেউ সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও পরবর্তীতে ইউটিউব ফেসবুক থেকে এই কাসের ভিডিও দেখে নিতে পারবে। অবশ্য একথাও সত্যি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও একশ’ ভাগ শিক্ষার্থী কাসে উপস্থিত থাকে না।