অ্যাম্বুলেন্স মালিক না হয়েও সমিতির সভাপতি! যশোরের ঘোপে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার লালনে সন্ত্রাসী চক্র

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের ঘোপ এলাকার একটি সন্ত্রাসী চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন স্থানীয় মানুষ। চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত এই চক্রের সদস্যরা। হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম সোহাগ এই সন্ত্রাসী চক্রের হোতা বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ঘোপ কবরস্থান ও ধানপট্টি বস্তি এলাকায় উঠতি সন্ত্রাসীদের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। গোটা ঘোপ এলাকার উঠতি সন্ত্রাসীদের অধিকাংশ এই চক্রের সদস্য। তারা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় থেকে শুরু করে নানা অপরাধের সাথে জড়িত এরা। আর এই চক্রের লালনকর্তা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগ। আরিফুল ইসলাম রিয়াদ (সভাপতি) ও আনোয়ার হোসেন বিপুলের (সাধারণ সম্পাদক) নেতৃত্বের জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন সোহাগ। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সুবাদে তিনি এলাকার উঠতি সন্ত্রাসীদের নিজের কাছে ভিড়িয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তার সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যদের ভয়ে এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননা। শফিকুল ইসলাম সোহাগের মতো একই কায়দায় রাজনৈতিক পরিচয়কে ব্যবহার করে ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে নানা অপরাধীদের নিজের কাছে ভিড়িয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন ঘোপ বউবাজারের এক সময়ের আলোচিত সন্ত্রাসী টাক শিপন। তিনি শহর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সন্ত্রাসীদের লালনকর্তা টাক শিপন ২০১৪ সালে ঘোপ জেল রোডের একটি মিষ্টির দোকানে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এই হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগও।
অ্যাম্বুলেন্স চালকদের একটি সূত্র জানায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রীক অন্তত ৬০টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ায় রোগী বহনের কাজ করে। এই অ্যাম্বুলেন্স চালকদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৪শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ঘোপের বল্টু নামে এক যুবক প্রতিমাসে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন। আগে অ্যাম্বুলেন্স প্রতি ২শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হতো। দুই মাস হলো ২শ’ টাকার পরিবর্তে ৪শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এই চাঁদা আদায়কারী বল্টু ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগের লোক। সূত্র জানায়, চাঁদা আদায় নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। কিন্তু শফিকুল ইসলাম সোহাগের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননা। সূত্র আরও জানায়, শফিকুল ইসলাম সোহাগের কোন অ্যাম্বুলেন্স নেই। তারপরও তিনি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি পরিচয় দিয়ে থাকেন। মূলত তিনি গায়ের জোরে সভাপতি বনে গেছেন। চালকদের অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুটি বে-সরকারি অ্যাম্বুলেন্সকে হাসপাতাল কেন্দ্রীক চলাচল করার সুযোগ করে দিয়েছেন শফিকুল ইসলাম সোহাগ। এ জন্য তিনি অ্যাম্বুলেন্স প্রতি ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এ ঘটনায় অন্যান্য চালক ও মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। কিন্তু শফিকুল ইসলাম সোহাগের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননা। ঘোপ এলাকার একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল সংলগ্ন বটতলা এলাকার থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক থেকে চাঁদা আদায়ের সাথে জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগের লোকজন। মিঠু নামে এক যুবক থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইকের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তার কাছ থেকে থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইকের চাঁদা নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি মিঠু এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসীরা চাকু নিয়ে তাকে ধাওয়া করেছিলো। এরপর থেকে মিঠু ভয়ে তাদের চাঁদা দিয়ে আসছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের আব্দুল লতিফদের সাথে প্রতিবেশী দীপুর জমির সীমানা বিরোধ রয়েছে। কিছুদিন আগে শফিকুল ইসলাম সোহাগ দলবল নিয়ে দীপুর পক্ষ থেকে আব্দুল লতিফদের হুমকি ধামকি দিয়ে এসেছেন। অপর একটি সূত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম সোহাগ লালিত সন্ত্রাসীরা প্রায় সময় ঘোপ সেন্ট্রাল রোড মোড় ও কবর স্থান এলাকায় আড্ডা দিয়ে থাকে। সেখানকার ফুড অফিস আঙ্গিনাতে তাদের আড্ডা দিতে দেখেছেন অনেকে। একটি সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগ ঘোপের টাক শিপন হত্যা মামলা, বেজপাড়ার সাবেক যুবলীগ নেতা মহাসীনের ওপর হামলার মামলার আসামি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্যসহ আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। যোগযোগ করা হলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগ অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির জোরপূর্বক সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তিনি নির্বাচিত সভাপতি। নির্বাচন হয়েছিলো কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মালিকরা জোর করেই তাকে সভাপতি বানিয়েছেন। অবশ্য তিনি স্বীকার করেন যে, তার কোন অ্যাম্বুলেন্স নেই। চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি কারো কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করেন না। এটা মালিক সমিতির চাঁদা। বল্টু সমিতির হয়ে চাঁদা তোলেন। তাকে মাসিক ৪ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। এছাড়া সমিতির অফিস ভাড়া ওই চাঁদা থেকে পরিশোধ করা হয়। ছাত্রলীগের ওই নেতা হাসপাতাল সংলগ্ন বটতলার মোড়ের থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডের মিঠুর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তারা নন, অন্য লোকজন সেখান থেকে চাঁদা নিয়ে থাকে। এছাড়া শফিকুল ইসলাম সোহাগ তার বিরুদ্ধে আনা অন্যসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।