করোনা : যশোরে লকডাউন এখন শুধু কাগজে কলমে!

0

আকরামুজ্জামান ॥ করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংক্রমণ এলাকায় লকডাউন কার্যকর করা। যশোরেও বলবৎ রয়েছে বিভিন্ন এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে লকডাউন। তবে এটি নামেই লকডাউন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কার্যত প্রশাসনের তদারকির অভাবেই লকডাউন কার্যক্রম এখন দায়সারাভাবে চলছে। বলা চলে করোনা প্রতিরোধে যশোরে চলছে সাইনবোর্ড সর্বস্ব লকডাউন।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যশোরে যখন করোনা সংক্রমণের এলাকা বাড়তে থাকে তখন যশোর জেলা প্রশাসন গোটা জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে। সংক্রমণ যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জেলার বাইরের এলাকা থেকে যাতে কোনো লোক যশোরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক-মহাসড়কে নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর জেলার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গত জুনের প্রথম দিকে যশোর জেলা প্রশাসন সংক্রমণের দিক বিবেচনায় করে রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণের রোগী থাকবে সেসব এলাকাকে রেডজোন চিহ্নিত করে মানুষের চলাচলে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এসব উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় কার্যত এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এখন যশোরে করোনা রোগীর বাড়ি বা এলাকায় লকডাউন ঘোষনা করলেও তা যথাযথ কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, যশোরে এখন প্রতিনিয়ত করোনার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ছুঁই ছুঁই অবস্থা। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৯২ জন। মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছেন ৩০ জন। কিন্তু সংক্রমণ যখন উচ্চতার দিকে তখন কেন সংক্রমণ এলাকায় কার্যকর লকডাউন হচ্ছে না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছে, এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে প্রশাসন গিয়ে লকডাউন লিখে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে। ওইসব বাড়ির আশপাশের লোকজন এ ভাইরাসের থাবা থেকে কতটা নিরাপদ তা ভেবে দেখা হচ্ছে না। যশোর উপশহর বি-ব্লকের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার এলাকায় একটি বাড়িতে করোনা রোগী রয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ওই বাড়ির দেওয়ালে লকডাউন লিখে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই বাড়িতে প্রবেশ বা আশপাশ দিয়ে মানুষের চলাচল আগের মতই রয়েছে।’ তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের বিষয়ে সাধারণ মানুষ যতটা উদাসীন তার চেয়ে বেশি উদাসীন প্রশাসন। প্রশাসন এসব এলাকায় কোনো খোঁজ খবর পর্যন্ত নিচ্ছে না। একই কথা বলেন, শহরের খালদার রোড এলাকার শামীম আকতার। তিনি বলেন, লকডাউন শব্দটি কার্যত এখন কাগজে কলমে। এখন এ নিয়ে কারোর মাঝে আগ্রহ নেই। প্রশাসন করোনা রোগীর বাসায় শুধু সাইন বোর্ড টানিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। আগে সংক্রমণ এলাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হলেও এখন তা দেখা যাচ্ছে না। যে যার মত নিরাপদে থাকছেন। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, এখন আর এলাকাভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম নেই। যেসব এলাকায় করোনা রোগী রয়েছে সেসব বাড়ি ও তার পাশে লকডাউন করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে কতটা এলাকায় লকডাউন কার্যকর হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে না পারলেও বলা যায় যেখানে করোনা রোগী রয়েছে সেখানেই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি ও আশপাশ এলাকায় যাতে লকডাউন বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন কাজ করে যাচ্ছেন।