বাগেরহাটে ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ,তদন্ত কমিটি

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ বাগেরহাটে দরিদ্রদের বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, সরকারি ঘর প্রদানের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তফা কামাল হারুণের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহনাজ পারভীন।
পিলজংগ গ্রামের দু’সন্তানের জনক জন্মান্ধ ফরহাদ সরদার বলেন, ‘জন্মের পর থেকে চোখে দেখতে পাই না। হারুণ মেম্বারকে বলেছিলাম আমাকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড দেন। তিনি আমার আইডি কার্ড ও ছবি নিয়েছেন। অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলে দুইশ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলেও আমাকে কোন কার্ড দেননি। দুইটা বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। যদি আমাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়া যায় তাহলে আমার খুব উপকার হবে।’
স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা কামাল হারুণ ইউপি মেম্বার হওয়ার পর থেকে মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা গ্রহণ ও আত্মসাত করছেন। জন্মনিবন্ধনের জন্যও টাকা গ্রহণ করেন তিনি। গরীব ও অশিক্ষিত মানুষরা বাধ্য হয়েই টাকা দেন তাকে।  দিনমজুর কুদ্দুস মোড়ল ও খলিল শেখ বলেন, ‘ভাঙ্গাচোরা ঘরে থাকি। ঘর থেকে পানি পড়ে। মেম্বার হারুণ সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন। ৭-৮ মাস আগে তিন হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু ঘর পাইনি। এখন ঘরের কথা বললে বলে সরকার যেদিন দিবে সেদিন পাবেন।’ ভ্যানচালক শাহজাহান শেখ, দিনমজুর ফারুকসহ এলাকার অনেকের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন মেম্বার মোস্তফা কামাল হারুণ।
বিধবা শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পরে মেম্বার হারুণের কাছে ঘুরেছি বিধবা কার্ডের জন্য। কার্ড পাওয়ার জন্য তাকে ৩’শ টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ঝড়ে আমার ঘর পড়ে গেলে ঘর দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকা চেয়েছিলেন। টাকা দিতে পারিনি, তাই ঘরও পাইনি।’  এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউপি মেম্বার মোস্তফা কামাল হারুণকে ফোন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদের সাথে কথা বলেন আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন? যারা অভিযোগ দিয়েছে আমি তাদেরকে চিনি। আমার সাথে আপনাদের কথা বলার দরকার নেই। অভিযোগ দিয়েছে, তদন্তে যা হয় হবে।’
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘এলাকাবাসীর কাছ থেকে মেম্বার মোস্তফা কামাল হারুণের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে আহবায়ক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত কাজের জন্য গোটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। এটা আমার উপজেলা পরিষদ চায় না। পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পেলে শাস্তি হবে।’