করোনার টীকা নিয়ে রাজনীতি হবে, লড়াই হবে কুৎসিত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বেশির ভাগ মানুষের কাছে করোনা ভাইরাসের টীকা খুব তাড়াতাড়িই আসবে না। উৎসাহের বিষয় হলো ১২টি দেশ থেকে শতাধিক সম্ভাব্য টীকা আবিষ্কার নিয়ে কাজ চলছে। এরই মধ্যে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রবেশ করেছে তার আটটি। এই প্রক্রিয়াতে ত্বরান্বিত করতে বীরের মতো কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় সংক্রমিত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে। ভাগ্য ভাল থাকলে সামনের বছর আমরা টীকা পেতে পারি। তা সত্ত্বেও এখনও একটি ঝুঁকি রয়েছে যে, মানবজাতি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হতে পারে। টীকা তৈরির ক্ষেত্রে এটা জটিল কিছু নাও হতে পারে। আবার টীকাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিও হতে পারে।
এই লড়াই হতে পারে তীব্র, অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আবার কখনো কখনো নোংরা। অনলাইন ব্লুমবার্গ অপিনিয়নে লেখা এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন আন্দ্রেজ ক্লুথ।
তিনি লিখেছেন, প্রথম সমস্যাটি হলো, যখন আমরা আশ্বস্ত হবো যে একটি টীকা কার্যকর ও নিরাপদ, তখন এটা সবার ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। তাই আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রথমে কে পাবে এই টীকা। কারা মোটেও পাবে না। বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। যোগ্য নেতৃত্বের অধীনে বিশ্ব হয়তো মর্যাদা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে এসব সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৪০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধে সারা বিশ্বের শিরদাড়ায় কাঁপন লেগেছিল। তা সত্ত্বেও মানবজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং স্মলপক্সকে নির্মূল করার পথ বের করেছে।
তবে এখন স্বাস্থ্যসেবা খাত বহুপক্ষীয়। এটা উদ্ভট রকম একটা খারাপ দিক। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন একটি শীতলযুদ্ধ শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে ‘আমার দেশ প্রথম’ এমন জাতীয়তাবাদ আরো দেশকে আক্রান্ত করছে, এমনকি যারা এসব টীকা নিয়ে কাজ করছে তারাও।
ধনী দেশগুলো টীকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে গরীব দেশগুলোকে হঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরা নিশ্চয় যুক্তরাষ্ট্রে আবিষ্কৃত এবং তৈরি করা টীকা অন্য দেশের সঙ্গে শেয়ার করতে নাও পারেন। এ বছরের শুরুর দিকে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যে, জার্মানির কিউরভ্যাক নামের কোম্পানি করোনার টীকা নিয়ে কাজ করছে। করোনার টীকা নিজের আয়ত্তে নেয়ার জন্য ওই কোম্পানিকে কিনে নেয়ার চেষ্টা করছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও জার্মান কর্মকর্তারা এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন।
নৈতিক এসব সমস্যা ঘরোয়া রাজনীতিকেও আক্রান্ত করবে। বেশির ভাগ মানুষ একমত হতে পারেন যে, সবার আগে ফ্রন্ট লাইনে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত হবে। তারপরও কোনোকিছুই পরিষ্কার নয়। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত? নাকি বয়স্ক মানুষদের? এই দুটি শ্রেণির মানুষ আক্রান্ত হলে তাদের মারা যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তরুণদের তুলনায় টীকায় তাদের বেলায় কাজ হয় কম। তাই যদি রোগ প্রতিরোধই লক্ষ্য হয়, তাহলে প্রবীণদের ক্ষেত্রে টীকার ধারণাটা কোনো সেন্স তৈরি নাও করতে পারে।
অত্যাবশ্যকীয় কর্মীদের তাহলে কি হবে এবং তারা কারা? অভিবাসী শ্রমিক এবং বন্দিরা বসবাস করেন গাদাগাদি করে বসবাস করা শিবিরগুলোতে। তাদের কি এই টীকার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া উচিত হবে? এই সময়ে ব্লাক লাইভস ম্যাটার একটি বিষয়। অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে জাতিগত দিকটাকে কি সামনে আনা উচিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিনো মানুষজন কোভিড-১৯ এ বৈষম্যমুলক দুর্ভোগে ভুগছেন। শ্বেতাঙ্গদের আগে কি তাদের এই টীকা পাওয়ার সৌভাগ্য হবে? যদি এইসব উভয় সঙ্কট রাজনৈতিক গতিবিধি হয় তবে পরবর্তী সবচেয়ে বড় শোডাউন হবে: বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মধ্যে এক অচলাবস্থা। করোনা মহামারির শুরুতে আশা দেখা দিয়েছিল যে, টীকাবিরোধীদের আবোলতাবোল বক্তব্য অযৌক্তিক হয়ে উঠবে এবং তাদের কর্মকান্ড ক্ষয়িষ্ণু হয়ে উঠবে। পক্ষান্তরে তা আরো ফুলেফেঁপে উঠছে।
মানবজাতি সব সময়ই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে কান দেয়। বিশেষ করে কোনো দুর্যোগের সময় তা বেশি ঘটে। উদাহরণ হিসেবে মহামারি নিয়ে একটি ভুয়া খবরভিত্তিক ভিডিওর কথা বলা যায়। সেখানে দাবি করা হয়, করোনা ভাইরাস হলো নতুন এক প্রতারণা। এর যে টীকা তা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে। এই ভিডিওটি ইউটিউবে কমপক্ষে ৭০ লাখ মানুষ দেখার পরে তা সরিয়ে নেয়া হয়। জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত কিছু লোক উদ্ভট ফ্যান্টাসির প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, বিশ্বের অন্যতম জনহিতৈষী বিল গেটস সার্স-কোভ-২ ইস্যুতে বিগ ফার্মা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, যাতে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্যের একজন একনায়ক হয়ে উঠতে পারেন। এর মাধ্যমে তিনি মাইক্রোচিফস আপনার ত্বকের নিচে ঢুকিয়ে দেবেন। ইন্টারনেটে এমন আবোলতাবোল কথাবার্তার অন্ত নেই।