জুনে ৩ দশকের সর্বনিম্নে ওপেকের উত্তোলন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর জেরে ধসে যাওয়া জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা করতে রেকর্ড উত্তোলন হ্রাসের চুক্তি হাতে নিয়েছিল অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) ও এর মিত্র দেশগুলো। ইরাক ও নাইজেরিয়া যথাযথভাবে চুক্তি না মানলেও জোটটি তাদের উত্তোলন ও সরবরাহ কমানোর প্রতিশ্রুতির শতভাগ পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের জুনে ওপেক জোটের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমে গত তিন দশকের সর্বনিম্নে নেমেছে। খবর ব্লুমবার্গ ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ে তথ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কেপলার, রাইস্ট্যার্ড এনার্জি, রাপিডিয়ান এনার্জি গ্রুপ এবং জেবিসি এনার্জি জিএমবিএইচের প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের সাহায্য নিয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত জুনে ওপেকের সদস্য দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, আগের মাসের তুলনায় যা দৈনিক গড়ে ১৯ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল কম। একই সঙ্গে পণ্যটির উত্তোলনের এ হার ১৯৯১ সালের মে মাসের পর থেকে সর্বনিম্ন। উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণে ওই সময় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন রেকর্ড পরিমাণ কমে গিয়েছিল।
চলতি বছরের জুনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বেশি উত্তোলন কমিয়েছে ওপেকের নেতৃত্বে থাকা সৌদি আরব। জুনে দেশটি দৈনিক গড়ে ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, যা ওপেক প্লাস কোটার তুলনায় প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল কম এবং ২০২২ সালের পর থেকে দেশটির সর্বনিম্ন উত্তোলন।
এ সময় কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত চুক্তির শর্ত পুরোপুরি মেনে চলেছে। তবে অ্যাঙ্গোলা, ইরাক ও নাইজেরিয়া উত্তোলন হ্রাসের চুক্তি পালনে এবারো ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাঙ্গোলা নির্ধারিত কোটার ৮৩ শতাংশ পালন করতে পেরেছে। নাইজেরিয়া ৭৭ শতাংশ এবং ইরাক ৭০ শতাংশ কোটা মেনে জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে।
এদিকে ভেনিজুয়েলার রেকর্ড জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস ওপেক প্লাসের বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা আরো সহজ করে তুলেছে। গত মাসে দেশটি দৈনিক গড়ে মাত্র ৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে। যদিও ওপেকের সংশ্লিষ্ট চুক্তির বাইরে রয়েছে ভেনিজুয়েলা। মূলত দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চলছে। ফলে দেশটি থেকে জ্বালানি তেলের রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতের মন্দায় দেশটির আয় নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত অন্য দুই ওপেক সদস্য ইরান ও লিবিয়ার উত্তোলন এ সময়ে স্থিতিশীল ছিল।
এদিকে ওপেক যখন জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে আনার বিষয়ে সাফল্য উদযাপন করছে, তখনো পণ্যটির বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা পিছু ছাড়েনি। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে গতি নেই। দেশে দেশে পণ্যটির মজুদ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়ে গত পাঁচ বছরের গড় মজুদের তুলনায় বাড়তির দিকে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পণ্যটির মূল্যে অবিরত চাপ তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ প্রতি ব্যারেল ব্রেন্টের দাম দাঁড়িয়েছে ৪২ ডলার ৮০ সেন্ট, আগের দিনের তুলনায় যা অপরিবর্তিত। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাসের দাম দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৪০ ডলার ৩২ সেন্ট, আগের দিনের তুলনায় যা ৩৩ সেন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ কম। তবে মহামারীর শুরুর দিকের তুলনায় পণ্যটির দাম যথেষ্ট বেড়েছে। এপ্রিলে ওপেক প্লাস যখন দৈনিক গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাসের চুক্তি করেছিল, তখন পণ্যটির ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ১৬ ডলার। বর্তমানে দাম বেড়ে ৪০ ডলারের আশপাশে অবস্থান করছে।
উল্লেখ্য, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর আগে থেকে ধুঁকতে থাকা জ্বালানি তেলের বাজার বড় ধরনের ধাক্কা খায়। মহামারীতে প্রথম পর্যায়ে পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক গড়ে তিন কোটি ব্যারেলের বেশি কমে যায়, যা পণ্যটির মোট বৈশ্বিক চাহিদার ৩০ শতাংশ। চাহিদার হঠাৎ পতনে এপ্রিলের শেষ নাগাদ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। গত ২০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এক ব্যারেল (প্রায় ১৫৯ লিটার) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মাইনাস ৩৭ দশমিক ৬৩ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
এ সময় পণ্যটির দামে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে করণীয় নির্ধারণে বসে ওপেক প্লাস। বৈঠকে মে ও জুনজুড়ে পণ্যটির উত্তোলন সক্ষমতার তুলনায় দৈনিক গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে ওপেক, যা পণ্যটির মোট বৈশ্বিক সরবরাহের ১০ শতাংশ। গত মাসে চুক্তির মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে চলতি মাসের শেষ অবধি নেয়া হয়েছে।