রেস্তরাঁর দুর্দিন বেকার লাখো কর্মী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দুর্দিন নেমে এসেছে দেশের হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসায়। দীর্ঘ বন্ধের পর রেস্টুরেন্টগুলো খোলা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হতেই হোটেল-রেস্তরাঁয় কমতে থাকে ক্রেতা। করোনার ভয়ে ক্রেতারা রেস্টুরেন্টে না আসায় ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পরেই সাধারণ ছুটি ঘোষণায় মুখ থুবড়ে পড়ে এই খাত। তবে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে আবারো খুলেছে হোটেল-রেস্তরাঁগুলো। কিন্তু-রেস্তরাঁগুলোতে নেই আগের মতো ভোজন রসিকদের ভিড়। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এখনো আগের রূপে ফিরেনি রেস্টুরেন্টগুলো। বিক্রি না হওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে রেস্তোরাঁর মালিকদের। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বিল ও নিয়মিত ভাড়া দিতে হচ্ছে। অনেক রেস্তোরাঁয় মাসিক ভাড়ার টাকা কয়েক মাসের বকেয়া পড়ে আছে। ফলে এখন ব্যবসায় লাভতো দূরের কথা বরং কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। কেএফসি, স্টার কাবাব, পিজ্জা হাট, বিএফসি ও নান্দুস এর মতো নামিদামি রেস্টুরেন্টও নজিরবিহীন ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিক্রি না হওয়ায় ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। এতে দক্ষ হয়েও অনেকে আকস্মিকভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যেই অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। পরিস্থিতি সাভাবিক না হলে আরো ৬০ শতাংশ কর্মী বেকার হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশে বিভিন্ন সময় হরতাল, অবরোধসহ নানা দুর্যোগে ব্যবসায় সাময়িক ব্যাঘাত ঘটলেও এতোটা ক্ষতির মুখে কখনো পড়েননি ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীতে এখন অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট খুলেছে। তবে করোনা আতঙ্কে আগের মতো ভিড় নেই। মানুষ এখনো আগের মতো খাবার খেতে বাইরে আসছেন না। হাতেগোনা কয়েকজন কাস্টমার ও কিছু পার্সেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে রেসেঁ্তারার কর্মকাণ্ড। বাকি সময় কর্মচারীদের অনেকটা অবসর কাটছে। কাওরান বাজারে অবস্থিত মেজবান রেসেঁ্তারার দু’টি শাখাই বন্ধ রয়েছে ৪ মাস ধরে। করোনা সংক্রমণের আগেই গত জানুয়ারি মাসে মালিক এটি বিক্রি করে দেন। পরে ৩ জনের শেয়ারে এটি ক্রয় করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দেশে করোনা রোগী ধরা পড়লে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় কাস্টমার কমতে থাকে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে রেস্তোঁরাটি। এর সত্ত্বাধিকারী বলেন, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় আমাদের মূল পুঁজি হারিয়ে ফেলেছি। প্রায় ২৬ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন খোলার অনুমতি থাকলেও খুলতে পারছি না। আদৌ পুনরায় ব্যবসায় ফিরতে পারবো কি-না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। পুঁজি হারিয়ে আমাদের পথে বসার মতো পরিস্থিতি হয়েছে। ২৬ থেকে ২৭ জন কর্মচারী কাজ করেতো সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। তারাও কাজ হারিয়ে দিশেহারা। এখন যদি কোনমতে রেস্টুরেন্ট খুলি তাতে আরো লোকসানে পড়তে হবে। কারণ বিক্রি হয় না। কাস্টমাররা আসেন না। ১০০ ভাগ বিক্রি না হলে কি করে আবার রিস্ক নিয়ে রেস্টুরেন্ট খুলবো? স্টার হোটেলসহ কতো নামিদামি রেস্টুরেন্টও এখন পর্যন্ত পুরোদমে খুলতে পারেনি। বাংলাদেশ রেসেঁ্তারা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরে হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। এতে কাজ করেন প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ শ্র্রমিক। কিন্তু কাজ হারিয়ে এদের বড় অংশই গ্রামে ফিরে গেছেন। সেখানেও তাদের কর্মহীন সময় পার করতে হচ্ছে। এদিকে রেস্তোঁরা মালিক সমিতি বলছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা রাখতে দিচ্ছে না। গত ২৮শে জুন আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে পুরো সময় ধরে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে সমিতির নেতারা সরকারের কাছে ৫ দফা দাবিও তুলে ধরেন। বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার রবীন মানবজমিনকে বলেন, ব্যবসার সঙ্গে দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। করোনার প্রভাবে এর বড় অংশ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে।