যশোরে করোনা উপসর্গে আরও দুইজনের মৃত্যু : আক্রান্ত ৮ জন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গতকাল যশোরে ১ জন চিকিৎসকসহ ৮ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে যশোরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫শ’ ১৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অভয়নগরে ৪ জন, যশোর সদরে ৩ জন এবং শার্শায় ২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন করোনায়। গতকাল যে ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা হলেন- যশোর শহরের পালবাড়ী খয়েরতলা এলাকার গৃহবধূ পারভীন আক্তার (৪৫), সদর উপজেলার বারীনগরের গৃহবধূ মাহাবুবা আক্তার (২৮), তার ভাগ্নে স্কুলছাত্র মাশরাফি (১০), চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ইওসি বিভাগের গাইনি কনসালটেন্ট ডা. হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারা (৪১), চৌগাছা কুঠিপাড়ার গৃহবধূ মোছা. রওশন আরা (৩২), একই এলাকার স্কুলছাত্র মো. তারেক (১৬), চৌগাছার ইব্রাহিম খলিল ও মারুফুর রশিদ। শহরের কারবালা এলাকার বাসিন্দা ডা. হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারা তার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনকালে এবং অন্যরা তাদের স্ব-স্ব এলাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, গতকাল যবিপ্রবি থেকে নমুনা পরীক্ষার ২০টি রিপোর্ট আসে। এর ভেতর ওই ৮৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনার উপসর্গ গলায় ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। গতকাল সকাল ৯টায় মারা যান হারুন সরদার (৫৬)। এদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিটে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল। ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সালাহউদ্দিন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শেষ সময়ে হারুন সরদারকে হাসপাতালে ভর্তি করার কারণে তিনি দীর্ঘ সময় চিকিৎসার সুযোগ পাননি। মৃত্যুর পর তার নমুনা নেয়া হয়েছে। গতকাল বাদজোহর ঘোপ স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে ঘোপ কবরস্থানে হারুন সরদারকে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ মৃতের বাসার সামনে গিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে তাকে দাফন করার জন্য স্বজনদের হুকুম দিয়ে আসে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। ১৫ দিন আগে হারুন সরদারের বোন রাবেয়া বেগম একই উপসর্গ নিয়ে বাসায় মারা যান। তার সংস্পর্শে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন হারুন সরদার। এ নিয়ে দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাকে আগে নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় চিকিৎসকগণ কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হারুন সরদারের ছেলে টগর হোসেন জানিয়েছেন তার ফুফু কিংবা পিতা মারা গেছে তাদের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়নি। তাই লকডাউন হয়নি। মৃতের শরীর থেকে নমুনা নেয়া হয়েছে রিপোর্ট পজেটিভ আসছে লকডাউন করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে শনিবার রাত ১০টার দিকে সিরাজুল ইসলাম (৬৩) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ায়। ২৭ জুন রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। তারও ছিল একই উপসর্গ। এ নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে গতকাল (২৮ জুন) পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা সন্দেহে। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষা শেষে কয়েকজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ৪৭ জন নারী ও পুরুষ রোগী পালিয়ে গেছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শহরের এইচএমএম রোডস্থ কাঁচামালের আড়ৎ ‘রবি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী‘ রবিন বিশ্বাসের অবস্থা গুরুতর। ২৭ জুন সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে রাতে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ঢাকায় না নিয়ে রবিন বিশ্বাসকে বাসায় রাখা হয়েছে। রবিন বিশ্বাসের বাড়ি শহরের লোন অফিসপাড়ায়। তার জামাই মিন্টু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতালের খাতায় তাকে কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ভক্তি পদ দাস (৬০) নামে একজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। কিন্তু তিনিও শহরের বেজপাড়ায় নিজ বাসায় রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত ৫শ’ ১৬ জনের ভেতর ১শ’ ৬২ জন সুস্থ হয়েছেন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় করোনা জয় করে গতকাল প্রথম অফিস করেছেন।