ভারতের চিনি উৎপাদন ৩ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়াতে পারে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥আগামী ১ অক্টোবর থেকে ভারতে শুরু হবে চিনির ২০২০-২১ বিপণন মৌসুম। নতুন মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে। উৎপাদন ছাড়াতে পারে ৩ কোটি ২০ লাখ টন—এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএমএ)। খবর ইকোনমিক টাইমস।আইএসএমএর সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে দেশটিতে মোট ৩ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার টন চিনি উৎপাদন হতে পারে, চলতি মৌসুমের তুলনায় যা ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। মূলত আখ মাড়াইয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি এ সময়ে দেশটিতে চিনি উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে।
তথ্য মতে, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। বাকি সময়ে আরো দেড় লাখ টন চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আইএসএমএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুম শেষে দেশটির চিনিকলগুলোতে মোট ২ কোটি ৭২ লাখ টন চিনি উৎপাদন হতে পারে।এক বিবৃতিতে আইএসএমএ জানিয়েছে, কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কয়েকটি অঞ্চলের লকডাউন শিথিল করেছে ভারত সরকার। এতে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির চাহিদা স্বাভাবিকে ফিরতে শুরু করেছে। ফলে পণ্যটির দাম চাঙ্গা হয়ে উঠছে। লকডাউনের মধ্যে চাহিদা কমায় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম কমে ৩১-৩১ দশমিক ৫০ রুপির মধ্যে কেনাবেচা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যটির দাম বেড়ে প্রি-লকডাউন স্তরের কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি মানভেদে ৩২ থেকে ৩৩ দশমিক ৫০ রুপিতে বেচাকেনা হচ্ছে।
আগামী মৌসুমে ভারতে চিনি উৎপাদন নিয়ে প্রাথমিক পূর্বাভাসে আইএসএমএ জানিয়েছে, চলতি বছর ভারতে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দেশটির চিনিকলগুলো পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান পাবে। ফলে আগামী মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন রেকর্ড বেড়ে ৩ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মৌসুম চলাকালে পরিমিত বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়াসহ সার্বিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা স্বাভাবিক ধরে পূর্বাভাসটি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় ব্রাজিলের পরই ভারতের অবস্থান। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন হয় উত্তরপ্রদেশে। চলতি মৌসুমের চিনি উৎপাদনে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে রাজ্যটি। তবে আগামী মৌসুমে রাজ্যটিতে পণ্যটির উৎপাদন নিম্নমুখী হয়ে পড়তে পারে। আইএসএমএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে উত্তরপ্রদেশে সব মিলিয়ে ১ কোটি ২৩ লাখ টন চিনি উৎপাদন হতে পারে। যেখানে চলতি মৌসুমে রাজ্যটিতে পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টন। মূলত এ অঞ্চলে আখের আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেছে। চলতি বছর রাজ্যটির মোট ২২ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১ শতাংশ কম। এছাড়া কৃষি পণ্যটির ফলনও কমতির দিকে রয়েছে।
ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র। ২০২০-২১ মৌসুমে রাজ্যটিতে মোট ১ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার টন চিনি উৎপাদন হতে পারে। চলতি মৌসুমে রাজ্যটিতে মাত্র ৬১ লাখ ৬০ হাজার টন চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছর মহারাষ্ট্রে আখের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রাজ্যটিতে এবার আখের আবাদি জমি বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। যদিও গত বছরের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যকার ভারি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় মহারাষ্ট্রের ৫০ হাজার হেক্টর আখের জমি পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।
এর বাইরে চলতি মৌসুমের তুলনায় ১০ লাখ টন বেড়ে ২০২০-২১ মৌসুমে কর্ণাটকে মোট ৪৩ লাখ ১০ হাজার টন চিনি উৎপাদন হতে পারে। তামিলনাড়ু ও গুজরাটে যথাক্রমে ৭ লাখ ৫১ হাজার টন ও ১০ লাখ ৮১ হাজার টন চিনি উৎপাদন হতে পারে। এ সময় দেশটির অন্যান্য রাজ্যগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৩৪ লাখ ৩০ হাজার টনে।