সামাজিক সংক্রমণে যশোরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের আশংকা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস যশোরে বিপজ্জনক সামাজিক সংক্রমণে বিস্তৃত হচ্ছে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের। গেল এক সপ্তাহে যশোর জেলার সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা দুই শতাধিক নমুনা পজিটিভ রেজাল্ট দিয়েছে। এর সিংহভাগই নতুন শনাক্ত হওয়া রোগী। যশোরের সিভিল সার্জনের অফিসের দেয়া হিসেব মতে, শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলায় মোট ৫১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আগের দিন শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৬৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মারা গেছেন সাতজন। নিরাময় লাভ করেছেন ১৫৭ জন। অন্যদিকে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে গত এক সপ্তাহে যশোর জেলার ৬৬১টি নমুনা পরীা করে ২০১টিকে পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২৬ জুন ৮২টি নমুনা পরীা করে ৩১টি, ২৫ জুন ১০৪টির মধ্যে ৩১টি, ২৪ জুন ১৪১টির মধ্যে রেকর্ড ৪৯টি, ২৩ জুন ১০৯টির মধ্যে ২৮টি, ২২ জুন ৮২টির মধ্যে ১৮টি, ২১ জুন ৪৯টির মধ্যে নয়টি এবং ২০ জুন ৯৪টির মধ্যে ৩৫টি নমুনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অণুজীববিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলছেন, এখনো পর্যন্ত যত নমুনা পজিটিভ ফল দিচ্ছে, বাস্তবে তার চেয়ে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তার মতে, পর্যাপ্ত পরীার অভাবে জানা যাচ্ছে না, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আসলে কত লোক। এছাড়া নমুনা যেভাবে সংরণ, পরিবহন ও পরীা করা হচ্ছে, তার মধ্যেও গলদ রয়েছে। ফলে ‘ফলস নেগেটিভ’ রেজাল্টের সংখ্যাও কম না। আবার, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগের মধ্যে কোনো শারীরিক উপসর্গ দেখা যায় না। উপসর্গবিহীন এই সব মানুষ মূলত নমুনা পরীা কার্যক্রমের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছেন ঠিকই। যশোর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্য ডা. গিয়াস উদ্দিন এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে বলছেন, ‘ফুল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো উপজেলা বা জনপদ বাদ থাকতো, তাহলে তাকে সীমিত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যেত। কিন্তু যশোরের আটটি ছাড়াও এই অঞ্চলের সব উপজেলায় করোনা রোগীদের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। ফলে এখনকার পর্যায় হলো ফুল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন।’
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলছেন, যখন কোনো ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট সোর্স খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন তাকে সামাজিক সংক্রমণ বলা যেতে পারে। তবে এখন যশোরাঞ্চলে সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে কি-না তা তিনি নিশ্চিত না। সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘আমি তো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ না। ফলে আমার পে বলা কঠিন। তবে ধারণা করতে পারি সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে।’ যশোরে প্রথম যাকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়, তিনি মণিরামপুর উপজেলার একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি কোথা থেকে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই তথ্য আজও উদ্ধার করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিভিল সার্জন বলেন, ‘এমন আরও কয়েকটি কেস আছে, যেগুলোর উৎস সম্বন্ধে আমরা জানতে পারিনি।’ যশোরের জেলা প্রশাসক এবং করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, গত ঈদের আগে কড়াকড়ি শিথিল করায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে আসেন। তাদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি। অভয়নগরে এই বিষয়ে কড়াকড়ি করায় ফল পাওয়া গেছে।’