লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর জের ধরে চলতি বছরের শুরু থেকে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন খাত ক্রমেই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বিশ্বজুড়ে কমতে শুরু করে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন। বছরের প্রথম মাসে যেখানে বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি টনের বেশি ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল, এপ্রিলে তা কমতে কমতে ১৩ কোটি ৬৫ লাখ টনের নিচে নেমে আসে। তবে সর্বশেষ মে মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন খাত। শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন আগের মাসের তুলনায় বেড়ে ফের ১৫ কোটি টনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মে মাসে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স ও মেটাল বুলেটিন।
ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানভুক্ত ৬৪ দেশে সব মিলিয়ে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কম। ওই সময় বিশ্বজুড়ে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল।
তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমলেও গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন বেড়েছে। গত এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ টন।এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে ১৫ লাখ ১২ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ। আর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪ লাখ ৪৪ হাজার টন ও ১৪ লাখ ৭১ হাজার টন।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির মাসভিত্তিক সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টনে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
গত মাসে শুধু চীনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এর বিপরীতে ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, তুরস্ক, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের ইস্পাত উৎপাদন খাতে মন্দা ভাব বজায় থাকতে দেখা গেছে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ। চলতি বছরের মে মাসে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫৮ লাখ টনে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন কমেছে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ উৎপাদক জাপানে মে মাসে ৫৯ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
অন্যদিকে গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ১৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৫৪ লাখ টনে নেমে এসেছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন হয়েছে ৪৮ লাখ টন ইস্পাত, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম।
গত মে মাসে ব্রাজিল ও তুরস্কে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন যথাক্রমে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ব্রাজিলে উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ টন ইস্পাত। তুরস্কে উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ টন ইস্পাত। একই সময়ে ইউক্রেনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১৬ লাখ টনে নেমেছে।
এদিকে চলতি বছরের মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে চীন। এ কারণে মে মাসে দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। অন্যদিকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ এখনো মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে এসব দেশে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে।