বিশ্বের যত দামি চাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চাল বিশ্বের জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি। বিশ্বজুড়ে ৩৫০ কোটির বেশি মানুষের নিত্যদিনের আহার এটি। শর্করা ও ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস চাল থেকে তৈরি ভাত ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য। প্রচলিত সিদ্ধ চালের পাশাপাশি অনেক ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ চাল রয়েছে। কিছু চাল রয়েছে যেগুলোর দাম আকাশচুম্বী। বিশেষ উৎপাদন পদ্ধতি, স্বাদের অনন্যতা কয়েকটি জাতের চালের দামকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনই কিছু দামি চাল নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজ প্রথম পর্ব—
সৌদি আরবের নাম শুনলে চোখে ভেসে ওঠে ধু-ধু মরুভূমি। পানি ও বৃষ্টির অভাবে কৃষি খাতে দেশটির অবস্থান নড়বড়ে। খাদ্যপণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদার অধিকাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে দেশটি। তবে একেবারেই যে কোনো শস্য আবাদ হয় না, তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি বেশ কয়েকটি শস্য উৎপাদনে উন্নতি করেছে। এর মধ্যে গম অন্যতম। এছাড়া যব, সবজিসহ বেশ কয়েক ধরনের ফলের আবাদ হয় এখানে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেশটি তার বালুময় প্রান্তরে বিশেষ এক ধরনের ধানের আবাদ করে, যা থেকে তৈরি হয় বিশ্বের অন্যতম দামি চাল হিসাউওয়ি।
সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর আল-আহসা। এখানকার বিস্তীর্ণ ভূমিজুড়ে চোখে পড়ে পাম গাছ। এছাড়া খেজুর ও ফলমূল আবাদে নগরীটি প্রসিদ্ধ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্বদরবারে আল-আহসা পরিচিতি পেয়েছে লালচে রঙের হিসাউওয়ি চালের উৎপাদন ভূমি হিসেবে, যা বিশ্বের অন্যতম দামি চালগুলোর একটি। এ জাতের প্রতি কেজি চালের বর্তমান বাজারমূল্য ৫০ রিয়াল (স্থানীয় মুদ্রা)। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ১ হাজার ১৫০ টাকা।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সৌদি আরবে এমনিতেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে মরুভূমি হওয়ায় পানি সেচের ব্যবস্থাও বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনে দেশটিতে জলসম্পদের সংকট চরমে উঠছে। ফলে সৌদি আরবে উৎপাদিত এ বিরল হিসাউওয়ি চালটির গুণগত মান বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
তাহের-আল-কদর নামের একজন স্থানীয় কৃষক বলেন, হিসাউওয়ি ধানের চাষে প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। রোপণের প্রথমদিকে চারাগুলো সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত রাখতে হয়। সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন টানা সেচের দরকার হয়। ফলে ধান সংগ্রহের আগ পর্যন্ত প্রায় চার মাস ক্রমাগত সেচ দিয়ে যেতে হয় কৃষকদের। সৌদি আরবের মতো মরুর দেশে এটা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।
একই সঙ্গে ধানটি উৎপাদনের জন্য প্রখর তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। তাহের-আল-কদর জানান, হিসাউওয়ি ধানের জন্য কমপক্ষে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, অন্যথায় শস্যটির সম্পূর্ণরূপে বৃদ্ধি ও গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এ কারণে আল-আহসার কৃষকদের ধানটি রোপণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জমি নির্বাচন করতে হয়। যেন জমিটি সহজেই পানিতে নিমজ্জিত রাখা সম্ভব হয়।
হিসাউওয়ি চাল গুণগত মানে অত্যন্ত পুষ্টিকর। ভরপুর কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ লাল চালটি অত্যন্ত উচ্চ পুষ্টির ধারক। বাত ও ভাঙা হাড় রোগীদের জন্য এটা নিরাময়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সদ্য সন্তান প্রসব করা নারীদের দ্রুত সুস্থতায় হিসাউওয়ি চাল অত্যন্ত কার্যকর। দুর্বলতা ও পুষ্টিহীনতা রোধে চালটি অদ্বিতীয়।