ভয়ানক পরিস্থতির পথে যশোর আরও দুই এলাকা রেড জোন

0

বিএম আসাদ ॥ মহামারী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্তের দিক দিয়ে যশোর জেলা ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গতকাল একদিনে আরও ১৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩শ’ ৪২ জন।  গতকাল যশোর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড ও অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়ন রেড জোন ঘোষণা করা হয়। যশোর সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছেন, যশোর গতকাল ৮৩টি নমুনা পরীক্ষা প্রতিবেদন আসে। এ রিপোর্টে ১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৩ জন যশোর সদর উপজেলা ও শহরের বাসিন্দা। পিতা ও শিশুপুত্র, সেবিকা, কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, ব্যাংকার, গৃহিনী রয়েছেন।


যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন, এ হাসপাতালের মেট্রোন, ডেপুটি চিফ ইন্সট্রাক্টর ফেরদৌসী বেগম (৫৫) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার বাড়ি উপশহরের বি-ব্লকে। একই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাজন লাল করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করতেন। রাজন লালের বাড়ি শহরের বারান্দীপাড়া ঢাকা রোড তালতলা এলাকায়। অনুরূপভাবে শহরের আরবপুরের আব্দুস সোবহান চাকলাদার (২৮) তার শিশুপুত্র অয়ন চাকলাদার (৭), জেলা ট্রাফিক পুলিশের এটি এসআই সেলিম হোসেন (২২), কনস্টেবল বাবলু মোল্যা (৫৭), যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী কিসমত নওয়াপাড়ার বাসিন্দা আলী কদর (৩৮), যশোর পুলিশ লাইনের নারী কনস্টেবল জান্নাতুল ফেরদৌসী (২৫), ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাঘারপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার শওকত হোসেন (৩৩), বেজপাড়ার ব্যবসায়ী স্বপন রায় (৫০), কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। শহরের বাইরে সদর উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন বারীনগরের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম (৫০), চুড়ামনকাঠি মাঠপাড়ার কৃষক সঞ্জয় প্রসাদ (৩২), বাঘারপাড়ার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সোলাইমান হোসেন (৪৫), মনিরামপুর উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান (৬০), অভয়নগর উপজেলা নওয়াপাড়ার জনতা ব্যাংক শাখার ক্যাশিয়ার মো. রোকনুজ্জামান (৩৪), একই এলাকার গৃহবধূ রিপানুর (৪২), বনগ্রামের গৃহবধূ রুমিন্নেছা খাতুন (৩৫) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।


সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছেন, এর ভেতর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮২টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ১৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে দু’টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। তাতে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ১৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যশোরে। এ যাবত যশোরে ৩শ’ ৪২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে গতকাল আরও ১শ’ ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে বলে সিভিল সার্জন দফতরের কর্তব্যরত ডা. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন।

সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, যশোর জেলায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটছে ব্যাপক। ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যশোর। যে কারণে প্রতিদিন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লকডাউনের পর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে জোন ঘোষণা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফল না হওয়ার কারণে এখন জোন পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গ্রিণ জোন থেকে ইয়োলো জোন আবার ইয়োলো জোন থেকে রেড জোনে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের দিকে যাওয়া হচ্ছে। যশোর জেলা প্রশাসন এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে সিভিল সার্জন আরও বলেন, ল্যাবে রিপোর্ট অনুযায়ী গতকাল আরও ৪টি নতুন জোন ঘোষণা করা হয়েছে। ইয়োলো জোন থেকে রেড জোন ও গ্রিণ জোন থেকে ইয়োলো জোনে কয়েক এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে মোতাবেক যশোর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড এবং অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়ন ছিল ইয়েলো জোনে। গতকাল যশোর পৌর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড ও অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়ন ‘রেডজোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। অনুরূপ বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়ন ও মনিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর ইউনিয়ন ছিল গ্রিণ জোন। গতকাল এ দুটি ইউনিয়ন ইয়োলো জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যশোরে ২৬টি এলাকা রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে। ১শ’ ৬৩টি জোনের ভেতর বাকি ১শ’ ৩৭টি ইয়োলো ও গ্রিণ জোন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। এদিকে, পৌরসভা রেড জোন বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক সহকারী কমিশনার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, জোন বাস্তবায়নের কাজ চলছে।