আম্পানের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়াতে দ্রুত সরকারি সহায়তা চান যশোরের চাষিরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত যশোরের কৃষকরা আদৌ সরকারি সহায়তা পাবেন কীনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঝড় পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে সরকারি প্রণোদনার অন্তর্ভূক্ত করা হবে এমন আভাস পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পক্ষই কিছু বলছে না। ঝড়ের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। এ নিয়ে চরম হতাশায় রয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। তারা ক্ষতি পুশিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়াতে দ্রুত সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। গত ২০ মে বুধবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বে লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা যশোর। ঝড়ের প্রভাবে এ জেলায় ব্যাপক হতাহতের পাশাপাশি ফসলের অপূরণীয় তি হয়েছে। সবজি, আম, লিচু, পানসহ মোট ৩২ হাজার ৫’শ ১৬ হেক্টর জমির ফল ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগের হিসেবে এ তির কথা বলা হলেও প্রকৃত হিসেবে তির পরিমান আরও বেশি বলে মাঠ পর্যায়ের চাষিরা দাবি করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের হিসাব অনুযায়ী যশোরে এবার পাট চাষ হয়েছিল ২৩ হাজার ৫ ’শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৭ ’শ ৮৩ হেক্টর জামির। যা মোট আবাদের ৫০ শতাংশ। শাক সবজি চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ৬ ’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৭’শ ৪৮ হেক্টর জমির। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। পেঁপে চাষ হয়েছিল ৭৫০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ৬০০ হেক্টর। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। কলা চাষ হয়েছিল ১৫০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ১১২৫ হেক্টর। যা মোট আবাদের ৭৫ শতাংশ। মরিচ আবাদ হয়েছিল ৬৭৫ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ৪০৫ হেক্টর জমির। যা মোট আবাদের ৬০ শতাংশ। মুগডাল চাষ হয়েছিল ১০৪৫ হেক্টর জমিতে। তিগ্রস্ত হয়েছে ৭৩২ হেক্টর। যা মোট আবাদের ৭০ শতাংশ। তিল আবাদ হয়েছিল ২৬৩৫ হেক্টর জমিতে। তিগ্রস্ত হয়েছে ২১০৮ হেক্টর জমির। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। ভুট্টার আবাদ হয়েছিল ৫৫ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ৪৪ হেক্টর জমি। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। আম ছিল ৩৮৯৫ হেক্টর জমিতে। তিগ্রস্ত হয়েছে ২৭১৬ হেক্টর জমির। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। লিচু ছিল ৭০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে তিগ্রস্ত হয়েছে ৪৮০ হেক্টর জমির। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। পান ছিল ১১০০ হেক্টর জমিতে। তি হয়েছে ৭৭৫ হেক্টর জমির। যা মোট আবাদের ৭৫ শতাংশ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ের পরের দিনই এসব ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আদৌ আসবে কীনা সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সুস্পষ্ট তথ্যও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আকতারুজ্জামান বলেন, আম্পানের আঘাতে যশোরে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য নিরুপণ করে কৃষি বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। কবে নাগাদ কৃষকদের সরকারি সহায়তা দেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার। তবে এই কৃষকদের পর্যায়ক্রমে সরকারি সহায়তা দেয়া হবে বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে আম্পানের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, যশোরের কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এখনই সরকারি সহায়তা প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি, করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতে তারা চরম খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় ঝড়ে এ বিপুল ক্ষতির কারণে তারা পথে বসে গেছেন। এ থেকে উত্তরণে একমাত্র সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই। জেলার চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক হযরত আলী বলেন, আম্পানে যশোরে সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে এ অবস্থায় কৃষককে দ্বিতীয় পর্যায়ের চাষ শুরু করতে হবে। কিন্তু কৃষক অর্থের অভাবে তা করতে পারছেন না। এজন্য সরকার যদি এই মুহূর্তে আমাদের প্রণোদনার আওতায় আনতো তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম। একই কথা বলেন, জেলার নোঙরপুর এলাকার চাষি আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির এই মুহূর্তে আমাদের এমন ক্ষতি হয়ে যাবে তা কখনও বুঝতে পারিনি। এখন কীভাবে বেঁচে থাকবো তা বলতে পারছিনা। মনে করেছিলাম সরকার আমাদের পাশে এসে সহায়তা করবে কিন্তু তার কোনো আলামত দেখছিনা। তিনি কৃষককে রক্ষা করতে দ্রুত সরকারি সহায়তার প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।