বিকল্প যানে ব্যস্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে সকল ধরণের গণপরিবহন বন্ধ রাখলেও ঈদকে সামনে রেখে এখন বিকল্প যানের দাপটে আবারো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসব যানে করে রাজধানী শুহর ঢাকা যাওয়া-আসা করছেন। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশীচৌকি বসিয়ে হাইওয়ে পুলিশ অর্থের মাধ্যমে এসব যানকে নিরাপদে মহাসড়ক ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন চালকেরা। সরেজমিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার থেকে ভবানীপুর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও যাত্রী সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে সরকার গত ২৪ মার্চ থেকে জরুরী কাজে নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত গণপরিবহনসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রথম দিকে মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন আর পূর্বের অবস্থা নেই। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকলেও মহাসড়কের নিষিদ্ধ যান তিন চাকার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, তিন চাকার ব্যাটারী চালিত ভ্যানের দাপটে মহাসড়ক ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এসব যানে করে সাধারণ মানুষ নিরাপদে ময়মনসিংহ হতে গাজীপুর পর্যন্ত গমন করছেন। সড়কে নিয়মিত পুলিশী তল্লাশী চৌকি থাকলেও তারা নানাভাবে প্রলুব্ধ হয়ে এসব যানকে নিরাপদে মহাসড়ক ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এছাড়াও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট মাঝারী পিক-আপ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ীতেও (প্রাইভেটকার) যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। প্রতিটি তল্লাশী চৌকি পার হতে যান অনুযায়ী পাঁচশ থেকে এক হাজার পর্যন্ত টাকা গুণতে হচ্ছে এসব যানের চালকদের। অন্যথায় মামলা দেয়াসহ নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। বিশেষ করে মাওনা হাইওয়ে থানার অধীন মহাসড়কের প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় নানা ধরনের বাণিজ্যে নেমেছে হাইওয়ে পুলিশ। প্রতিদিনই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান হতে অর্ধশত বাহন আটক করা হলেও পরে বিভিন্ন অংকের অর্থ নিয়ে সন্ধ্যার পর ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে স্পট বাণিজ্যের অভিযোগও। সারাদিনই হাইওয়ে থানাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পুলিশের সোর্সদের সিন্ডিকেট। তারা গাড়ী আটক ও ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সাধে মধ্যস্থতা করে থাকেন।
ময়মনসিংহ থেকে অটোরিক্সায় গাজীপুর পর্যন্ত এসেছেন চৌরাস্তা শাখার ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, জরুরী প্রয়োজনে তাকে ময়মনসিংহে যেতে হয়েছিল। তিনি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় গিয়ে ফের ফিরে আসেন। মহাসড়কে চলতে গিয়ে তার অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়কে সব ধরনের যান চলছে। মানুষও চলাফেরা করছে। শুধু বন্ধ গণপরিবহন। ব্যাটারী চালিত গাড়ীতেও চারজনের জায়গায় ছয়জন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এখানেও নেই তেমন কোন সামাজিক দুরুত্ব। সাধারণ মানুষও স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে, কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়ার ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছে । মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের অটো চালক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, করোনা ক্লান্তিকালে ঘরে খাবার নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলাম। আঞ্চলিক সড়কে যাত্রী না থাকায় অন্যান্য অটো চালকদের মতো অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাসড়কে উঠেছিলাম। পুলিশের এক সোর্স প্রতিদিন মাওনা থেকে জৈনাবাজার পর্যন্ত অটো চলাচলে ২০০টাকা দাবি করেন। তার দাবি অনুযায়ী টাকা না দেয়ায় ২ মে ওই সোর্সের সহায়তায় তার গাড়িটি আটক করে ১০হাজার টাকা দাবি করেন মাওনা হাইওয়ে থানার এসআই শাহজাহান। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে মাসে ১হাজার টাকা সুদ দেয়া শর্তে ৫হাজার টাকা এনে ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাতে দিলেও এখনো অটোরিক্সাটি ছাড়িয়ে নিতে পারেননি।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা গ্রামের অটো চালক রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার অটোরিক্সাটি আটক করে মাওনা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক শাহজাহান। পরে তার গাড়িটি ২ হাজার টাকা নিয়ে দেখা করতে বলেন। ঘন্টা খানেক পর এক হাজার টাকায় অটোরিক্সাটি ছাড়িয়ে আনেন। এসময় পুলিশের এই কর্মকর্তা তার সোর্সকে একশ ও তালা খুলতে আরও একশ টাকা দিতে বলেন। এর আগের দিনও জৈনাবাজারের সড়ক বিভাজন থেকে তার গাড়িটি এই পুলিশ কর্মকর্তা আটক করলে ২হাজার একশ টাকা বিমিয়ে তিনি ছাড়িয়ে আনেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তা শাহজাহান তার বিরুদ্ধে অটো চালকদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে তিন চাকার যান নিষিদ্ধ থাকার পরও নানা অজুহাতে মানুষ এসব গাড়ী মহাসড়কে নিয়ে বের হয়েছে। পুলিশ প্রতিনিয়ত এসব যান আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের টাকা নেয়ার বিষয়টা অবান্তর। তিনি আরো জানান, মহাসড়কে পুুলিশের তল্লাশী চৌকি পার হতে চলাচলকারী যানের মালিকরা নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেয়ায় তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। গাজীপুর হাইওয়ে জোনের পুলিশ সুপার আলী আহমদ জানান, মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের কোন ধরনের সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজন ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।