ধস নামতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি উত্তোলনে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নেয়া সরকারি বিধিনিষেধের আওতায় দেশে দেশে আর্থিক ও শিল্প খাতে সীমাবদ্ধতা টানা হয়েছে। এতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি খাত। ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি দৈনিক গড়ে ২৯ লাখ ব্যারেল কমে যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতেও ধস নামতে পারে। এ বছর দেশটির জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার উত্তোলন ও চাহিদা নিম্নমুখী প্রবণতায় পড়তে পারে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
ইআইএর জ্বালানি বাজারবিষয়ক মে মাসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের চাহিদা দৈনিক গড়ে ২২ লাখ ব্যারেল কমে ১ কোটি ৮৩ লাখ ব্যারেলে নামতে পারে। চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসতে পারে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলনও। এ বছর দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন দৈনিক গড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল কমে যেতে পারে। ২০১৯ সালে দেশটি দৈনিক গড়ে ১ কোটি ১৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করে রেকর্ড করেছিল।
মহামারী সংক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশটিতে যানবাহন চলাচল স্থগিত রয়েছে। মূলত এর জের ধরেই দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদার পতন ঘটেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) যুক্তরাষ্ট্রের যানবাহন খাতে পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার কমে দৈনিক গড়ে ৭০ লাখ ব্যারেলে নামতে পারে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির এ খাতে দৈনিক গড়ে ৮৭ লাখ ব্যারেল পেট্রল ব্যবহার হয়েছিল। অর্থাৎ চলতি প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে মোটর জ্বালানির চাহিদা দৈনিক আরো ১৬ লাখ ব্যারেল কমে যেতে পারে। তবে বছরের বাকি অর্ধেকে গিয়ে দেশটিতে পণ্যটির চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ইআইএ। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোটর জ্বালানির চাহিদা বেড়ে দৈনিক গড়ে ৮৭ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হতে পারে।
এদিকে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল চাহিদায় মন্দা ভাব বজায় থাকলেও আগামী বছর খাতটিতে চাঙ্গা ভাব ফিরতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইআইএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের চাহিদা দৈনিক গড়ে ১৫ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে। তবে আগামী বছরও দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমতির দিকে থাকতে পারে। ২০২১ সালে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন দৈনিক গড়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল কমে ১ কোটি ৯ লাখ ব্যারেলে নামতে পারে।
অন্যদিকে চলতি বছর ও আগামী বছর দুই বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে পারে। উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে এ সময় দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় পতন দেখা দিতে পারে। ইআইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশটির খনিগুলো থেকে দৈনিক গড়ে ৮ হাজার ৯৮৪ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলিত হতে পারে। ২০২১ সালে পণ্যটির উত্তোলন আরো কমে দৈনিক গড়ে ৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ঘনফুটে নেমে যেতে পারে। ২০১৯ সালে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন খাতে যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড করেছিল। গত বছর দেশটি দৈনিক গড়ে ৯ হাজার ২২১ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করেছিল, যা ছিল এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ উত্তোলন। ইআইএর এ পূর্বাভাস সত্যি হলে ২০১৬ সালের পর এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন খাতের প্রথম বার্ষিক পতন।
এদিকে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার কমে দৈনিক গড়ে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি ঘনফুটে নামতে পারে। আগামী বছর পণ্যটির ব্যবহার আরো কমে দৈনিক গড়ে ৭ হাজার ৯১৭ কোটি ঘনফুটে নামতে পারে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে পরপর দুই বছর দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমতির দিকে ছিল।
একই পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে কয়লা খাতেও। চলতি বছর দেশটির কয়লা উত্তোলন কমে ১৯৬৪ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামতে পারে। গত বছরও দেশটির কয়লা উত্তোলন রেকর্ড কমে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ৬৯ কোটি শর্ট টন কয়লা উত্তোলন করেছিল, যা ছিল ১৯৭৮ সালের পর থেকে পণ্যটির সর্বনিম্ন উত্তোলন। এবার তা আরো কমে ৫২ কোটি ৩০ হাজার শর্ট টনে নামতে পারে। তবে ২০২১ সালে পণ্যটির উত্তোলন বেড়ে ৫৫ কোটি শর্ট টনে উন্নীত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইআইএ।