১১ বছরের সর্বনিম্নে ভারতে স্বর্ণের চাহিদা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবহারকারী দেশ। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশটিতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদায় নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। এতে বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে পণ্যটির সম্মিলিত চাহিদা ব্যাপক হারে কমে গেছে। এ সময় দেশটিতে স্বর্ণের চাহিদা কমে গত ১১ বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস ও সিনহুয়া।
ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতে স্বর্ণের মোট চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১০১ দশমিক ৯ টন, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩৬ শতাংশ কম। প্রান্তিকভিত্তিক পতনে যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পতন। ডলার ও রুপির মূল্যে পণ্যটির চাহিদা কমেছে যথাক্রমে ২২ ও ২০ শতাংশ। ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে স্বর্ণের মোট চাহিদা ছিল ১৫৯ টন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ভারতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা কমেছে ৫৭ দশমিক ১ টন।
মূলত স্বর্ণ অলংকারের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এ সময় সামগ্রিকভাবে ভারতে স্বর্ণের মোট চাহিদা কমেছে। ডব্লিউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে স্বর্ণ অলংকারের চাহিদা কমে ৭৩ দশমিক ৯ টনে নেমেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪১ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে পণ্যটির চাহিদা ছিল ১২৫ দশমিক ৪ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভারতে স্বর্ণ অলংকারের চাহিদা ৫১ দশমিক ৫ টন হ্রাস পেয়েছে। এদিকে এ সময় স্বর্ণ খাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগের চাহিদা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কমে ২৮ দশমিক ১ টনে নেমেছে, ২০১৯ সালে যা ছিল ৩৩ দশমিক ৬ টন।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশটিতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদায় পতনের পেছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছে ডব্লিউজিসি। বছরের শুরু থেকে স্বর্ণের উচ্চমূল্যে এক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। চলতি বছর ধাতুটির মূল্য বাড়তে বাড়তে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা গত আট বছরের মধ্যে পণ্যটির সর্বোচ্চ দাম। এছাড়া বছরের প্রথম মাসেই চীনে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববাণিজ্য অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এর আগেই মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে আঘাত হানে। সব মিলিয়ে বছরের শুরু থেকেই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছিল। এরপর ফেব্রুয়ারিতে এসে চীনের গণ্ডি ছাড়িয়ে নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে ২৫ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত ভারতে শুরু হয় দেশব্যাপী লকডাউন। এতে দেশটি প্রায় সব ধরনের আর্থিক ও শিল্প খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ের সংমিশ্রণে প্রথম প্রান্তিকে দেশটির স্বর্ণ চাহিদায় রেকর্ড পতন ঘটেছে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্বর্ণ অলংকারের বৈশ্বিক উৎপাদন চাহিদা কমে ৩২৫ দশমিক ৮ টনে নেমেছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউজিসি, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩৯ শতাংশ কম। একই সঙ্গে তা গত এক দশকের মধ্যে পণ্যটির সর্বনিম্ন ব্যবহারের হার। তবে স্বর্ণে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বাড়ায় এ সময় পণ্যটির মোট চাহিদায় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খাতে স্বর্ণের মোট চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩ টনে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১ শতাংশ বেশি।