আরো দুইজন মাদকসেবীর মৃত্যু, ঘটনা তদন্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কমিটি গঠন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভেজাল অথবা বিষাক্ত মদ পানে যশোরে আরো দুজন মাদকসেবীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রল্লাদ দাস (৪৫) নামে একজন মাদসেবীর মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্যু হয়েছে। প্রশান্ত দাস (৩৮) নামে অপর এক মাদকসেবীর গত সোমবার রাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এ নিয়ে জেলায় ১৭ জন মাদকসেবীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। তবে মদ পানে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় এবার টনক নড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। তারা এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। দুজন ইনসপেক্টরকে নিয়ে গঠিত ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শহরতলীর আরবপুর গোরাপাড়ার (সুইপারপট্টি) কেষ্টপদ দাসের ছেলে প্রল্লাদ দাসকে মঙ্গলবার বিকেলে পরিবারের লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগেরদিন সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে একই এলাকার অজিত দাসের ছেলে প্রশান্ত দাস গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু অল্প সময় পর তার মৃত্যু হয়। অ্যালকোহল বিষক্রিয়া জনিত কারণে সে মারা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রল্লাদ দাস ও প্রশান্ত দাসসহ কয়েকজন একই সাথে মদ পান করেছিলো। মদের বিষক্রিয়ায় এই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে কোতয়ালি থানা পুলশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম দুজনের মধ্যে প্রশান্ত দাসের মদ পানে মৃত্যুর সত্যতা স্বীকার করেছেন। এদিকে যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে ভেজাল অথবা বিষাক্ত মদ পানে একের পর এক মাদকসেবীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. বাহাউদ্দিন জানান, গত ২৭ এপ্রিল ইনসপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান ও ইনসপেক্টর বাপন সেনকে নিয়ে গঠিত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে যশোরের ৩টি সুইপার কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল মদ এবং চোলাই মদের ব্যবসা হলেও এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যক্রর পদক্ষেপ নেয়া হয়না। মূলত সুইপাররা বিনা পারমিটে মাদক সেবনের সুযোগ নিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। একাধিক সূত্র জানায়, শহরের এমকে রোডস্থ পুরনো পৌরসভার সামনের সুইপারপট্টি, রেলবাজার সুইপারপট্টি এবং খোলাডাঙ্গা সুইপারপট্টিতে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল মদ ও চোলাই মদের ব্যবসা হচ্ছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিলার ইয়াকুব কবিরের দোকান থেকে পতিতাপল্লীর অবৈধ দোকান ছাড়াও উল্লিখিত ৩টি সুইপারপট্টিতে গোপনে মদের একটি বড় চালান চলে যায়। তবে সুইপারদের পারমিট ছাড়া মদ সেবনের সুযোগ রয়েছে। পারমিট ছাড়া মদ সেবনের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা রীতিমতো ব্যবসা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই মদের সাথে রেক্টিফাইট স্পিরিট, ডিনেচার স্পিরিট, ঘুমের ওষুধ এবং পানি মিশিয়ে নিজস্ব তৈরি মদ তারা বিক্রি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে চোলাই মদ তৈরি করেও সুইপারপট্টিগুলোতে বিক্রি করা হয়। সূত্র জানায়, সুইপারপট্টিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তেমন একটা অভিযান হয়না। এ কারণে ব্যবসার সাথে জড়িতরা রীতিমতো নিজের ঘরে আসর বসিয়ে থাকে। বাইরের অনেকেই সুইপারপট্টিতে মদ সেবন করা নিরাপদ মনে করে থাকে। এসব লোকজন সুইপারপট্টিতে এসে মদ সেবন করে। উল্লেখ্য, তিনটির মধ্যে এমকে রোডস্থ পুরনো পৌরসভার সামনের সুইপারপট্টিতে ভেজাল ও চোলাই রমরমা ব্যবসা হয় সবচেয়ে বেশি। এখানে দেবলীয়া, কালু, মতি, রাজু, জুয়েল, অশোক, বাদল, সুজন, মান্না, বাবু, কেড়ে, রাজা, রামলাল, সার্জেন্ট, পান্না এবং মাসী নামে পরিচিত এক নারীসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।