উল্লম্ফনের পর কমতে পারে বৈশ্বিক তুলা উৎপাদন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০১৮-১৯ বিপণন বর্ষে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় ছিল। তবে চলতি ২০১৯-২০ বিপণন বর্ষে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন আগের বর্ষের তুলনায় বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ ইউএসডিএ। একই প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, চলতি বিপণন বর্ষে বাড়লেও আগামী ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ফের নিম্নমুখী প্রবণতায় ফিরে যেতে পারে। ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে তুলার আবাদি জমি হ্রাস এ সময়ে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন হ্রাসের ক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। খবর ফাইবারটুফ্যাশনডটকম।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরের ১ আগস্ট তুলার বিপণন বর্ষ শুরু হয়, যা শেষ হয় পরের বছরের ৩১ জুলাই। ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে ১১ কোটি ৮৫ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা উৎপাদন হতে পারে, যা চলতি বিপণন বর্ষের তুলনায় ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।
মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ বিপণন বর্ষে বিশ্বজুড়ে মোট ১১ কোটি ৮৬ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বিপণন বর্ষে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে ১২ কোটি ৩০ লাখ বেলে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও পরের বিপণন বর্ষে তা ফের ১১ কোটি বেলের কোটায় নেমে যেতে পারে। চলতি বিপণন বর্ষে ভারতে তুলার আবাদি জমি রেকর্ড বেড়েছে। এছাড়া দেশটিতে একরপ্রতি ফলন আগের তুলনায় বাড়ায় পণ্যটির মোট বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া ভারতের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যটির উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে।
তবে আগামী বিপণন বর্ষে ভারতসহ অন্যান্য শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশে তুলার আবাদ কমে যেতে পারে, যা পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদনে নিম্নমুখী প্রবণতা নিয়ে আসতে পারে। ইউএসডিএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ভারত, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্রসহ আগামী বিপণন বর্ষে তুলার বৈশ্বিক আবাদি জমির পরিমাণ এবারের তুলনায় ৪ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এর মধ্যে শুধু ভারতে আগামী বিপণন বর্ষে তুলার আবাদি জমির পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটির অব্যাহত নিম্নমুখী দাম স্থানীয় কৃষকদের অন্যান্য লাভজনক শস্য আবাদে ঝুঁকিয়ে দিতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
একই পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে ব্রাজিলেও। দেশটি দুই বছর ধরে তুলার আবাদি জমির পরিমাণ রেকর্ড বাড়িয়েছে। ফলে এ সময়ে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন উল্লেভযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে আগামী বছর ব্রাজিলে পণ্যটির আবাদ কমে যেতে পারে। সঙ্গে কমে যেতে পারে উৎপাদন। আগামী বিপণন বর্ষে ব্রাজিলে তুলা উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় ১২ লাখ বেল কমে যেতে পারে।
এদিকে চলতি বিপণন বর্ষে উৎপাদন বাড়লেও আবাদি জমি হ্রাসের জেরে আগামী বিপণন বর্ষে মন্দায় পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে তুলার উৎপাদন। ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে এবার তুলনায় পণ্যটির উৎপাদন ছয় লাখ বেল কমে যেতে পারে। তবে বিপরীত চিত্র দেখা দিতে পারে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানে। প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে চলতি বিপণন বর্ষে দেশ দুটিতে তুলার উৎপাদন রেকর্ডে কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। তবে আগামী বিপণন বর্ষে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের এ খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে অস্ট্রেলিয়ায় তুলার উৎপাদন এবারের তুলনায় আট লাখ বেল বাড়তে পারে। কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রচণ্ড দাবদাহ বিরাজ করেছে, যা গত বছর এসে প্রকট আকার ধারণ করে। এতে দেশটির সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর প্রভাব পড়ে দেশটির তুলা উৎপাদন খাতেও। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকে ফিরেছে। এতে দেশটির শুষ্ক ভূমি অনেকটা আর্দ্র হয়ে উঠেছে। পানি সেচের ব্যবস্থাও জোরদার হয়েছে। এ পরিস্থিতি আগামী বিপণন বর্ষে দেশটিতে তুলার উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ সময়ে পাকিস্তানে তুলা উৎপাদন খাতেও চাঙ্গা ভাব ফিরতে পারে। ২০২০-২১ বিপণন বর্ষে চলতি বর্ষের তুলনায় পাকিস্তানের তুলা উৎপাদন আট লাখ বেল বাড়তে পারে।
তবে আগামী বিপণন বর্ষে চীনের তুলা উৎপাদন খাতে মন্দা ভাব অব্যাহত থাকতে পারে। মূলত দেশটিতে পণ্যটির আবাদ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। চীন ১৯৮২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা বিশ্বের শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ ছিল। এরপর দেশটিকে টপকে প্রথম স্থানে উঠে যায় ভারত। ২০১৮-১৯ বিপণন বর্ষে এসে দেশটি ফের বিশ্বের প্রথম তুলা উৎপাদনকারী দেশের স্থান দখলে নেয়। তবে ইউএসডিএর এ পূর্বাভাস সত্যি হলে চলতি বিপণন বর্ষে চীনকে পুনরায় ছাড়িয়ে তুলার শীর্ষ উৎপাদকারী দেশের তালিকায় চলে আসতে যাচ্ছে ভারত, যা ২০২০-২১ বিপণন বর্ষেও অব্যাহত থাকতে পারে।