চিত্রায় তেলের খালি বোতলের রহস্য উদ্ঘাটন

0

নড়াইল সংবাদদাতা॥ নড়াইলের চিত্রা নদীতে ভাসমান টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) সায়াবিন তেলের খালি বোতলের রহস্য অবশেষে উদ্ঘাটন হয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রহস্য উদ্ঘাটন হলো। বুধবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শহরের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে টিসিবির ডিলার এস এম সামমুজ্জামান খোকনকে (৪৫) গ্রেফতারপূর্বক সেই তেল উদ্ধার করা হয়। এ সময় তিনটি ড্রামে রাখা ৫ হাজার লিটার টিসিবির সায়াবিন তেল ও তেলের খালি বোতল এবং ২৩ হাজার কেজি চিনি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ডিলার খোকনকে ৬ মাসের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৩ মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় নড়াইলের রূপগঞ্জ এলাকায় চিত্রা নদীতে টিসিবির সায়াবিন তেলের শতাধিক খালি বোতল ভাসতে দেখে স্থানীয় খেয়ামাঝিরা তা উদ্ধার করেন। তবে তাৎক্ষণিক কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। এরপর মাঠে নামে পুলিশ। অবশেষে বুধবার বিকেলে সায়াবিন তেলের খালি বোতলের রহস্য উদঘাটন হলো।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), ডিএসবিসহ থানা পুলিশের দিনরাত পরিশ্রমের ফলে চিত্রা নদীতে ভাসমান টিসিবির সেই সায়াবিন তেলের খালি বোতলের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। এ অভিযানে জেলা প্রশাসকও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন। এ ঘটনায় রূপগঞ্জের টিসিবির ডিলার এস এম সামমুজ্জামান খোকনকে গ্রেফতারপূর্বক সেই তেল উদ্ধার করা হয়। খোকন টিসিবির সায়াবিন তেল প্রকৃত ভোক্তাদের মাঝে বিক্রি না করে অসৎ উদ্দেশ্যে তেল ড্রামে ঢেলে শতাধিক বোতল চিত্রা নদীতে ফেলে দেয়। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, চিত্রা নদীতে টিসিবির সায়াবিন তেলের খালি বোতল ভেসে উঠার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে প্রশাসন। অবশেষে অপরাধীকে চিহিৃত করা সম্ভব হয়েছে। তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। অন্যরা যাতে এ ধরণের অন্যায় না করে সেদিকে আমরা সর্তক আছি।
এদিকে নড়াইলের রূপগঞ্জে টিসিবির ডিলার পরিতোষ কুন্ডু (৬৫) সায়াবিন তেল অবৈধ ভাবে বিক্রি করার অপরাধে গত ১৬ এপ্রিল দুপুরে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় চার দোকানির কাছ থেকে টিসিবির ৬৭ লিটার সায়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এ তেল তারা টিসিবির ডিলার পরিতোষ কুন্ডুর কাছ থেকে কেনেন। এ ঘটনায় ডিলার পরিতোষ কুন্ডুকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা এবং খুচরা পর্যায়ের চার দোকানিকে আড়াই হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরিতোষ কুন্ডু কারাগারে থাকায় তার ছেলে আকাশ কুন্ডু জরিমানার ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কারণ, এর আগে ১৪ এপ্রিল দুপুরে টিসিবির ১৮ বস্তা চিনি (বস্তাপ্রতি ৫০ কেজি) এবং ২৪ বস্তা ছোলা (বস্তাপ্রতি ২৫ কেজি) অবৈধ ভাবে বেচাকেনা ও মজুদ রাখার অভিযোগে ডিলার পরিতোষ কুন্ডুসহ এক দোকানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে ডিলার পরিতোষ কুন্ডুর দোকানে সায়াবিন তেল অবৈধ ভাবে বেচাকেনার ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে ১৮ ও ১৯ এপ্রিল কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কালোবাজারে বিক্রি হওয়া ৮৭ লিটার টিসিবির তেল এবং ৫০ কেজি চিনিসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে কালিয়া উপজেলার সাতবাড়িয়া বাজারের রুবেল ফরাজির দোকান থেকে ৮০ লিটার এবং পাটেশ্বরী বাজারের আকরামুল শেখের দোকান থেকে সাত লিটার টিসিবির সয়াবিন তেল উদ্ধারসহ রুবেল ও আকরামুলকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া কালিয়ার জামরিলডাঙ্গা বাজারের তৌহিদ ইসলামের দোকান থেকে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চিনি উদ্ধারসহ তৌহিদকে আটক করা হয়। এরপর টিসিবি পণ্য বিক্রেতা পেড়লি বাজারের সুভাষ সাহাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় কালিয়া থানায় পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে।