চূড়ান্ত হয়নি করোনায় কর্মহীনদের তালিকা, বরাদ্দও চায়নি জেলা প্রশাসন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার প্রভাবে কর্মহীন মানুষের তালিকা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বরাদ্দ চাইলেই প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে সরকার। এ ল্েয জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। গত ২৯ মার্চ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ্ কামাল স্বারিত চিঠি সব জেলা প্রশাসক পেয়েছেন। কিন্তু চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনেও কর্মহীনদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা অনুযায়ী বিশেষ বরাদ্দ চাননি কোনও জেলা প্রশাসক। তাই সে অনুযায়ী ত্রাণবাবদ সহায়তা এখন পর্যন্ত পাঠায়নি ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে বরাদ্দপত্র পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হবে। তবে মানবিক সহায়তা হিসেবে জেলাভিত্তিক চাল ও নগদ অর্থ ও শিশুখাদ্য কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যা বর্তমানে বিতরণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব কর্মহীন মানুষের তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কাছ থেকে করোনার কারণে কর্মহীন মানুষদের (যেমন ভিুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে সংসার চালায়) তালিকা সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। ২৯ মার্চ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ্ কামাল সব জেলা প্রশাসকের কাছে এ নির্দেশ সম্বলিত চিঠিও পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কাছ থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী কর্মহীন মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের পরিমাণ মন্ত্রণালয়ে জানাতে বলেছেন। কিন্তু এখনও তা জানতে না পারায় করোনার কারণে কর্মহীন মানুষদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে পারেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র পাওয়া মাত্রই দেশের সব জেলায় ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত কর্মহীন মানুষদের জন্য সরকারের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি সাময়িক সামাল দিতে এরই মধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিশেষ বরাদ্দ বাবদ সরকারের মানবিক সহায়তা হিসেবে ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নয় হাজার ৪০০ টন চাল, চার কোটি ৭০ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্য কেনা বাবদ এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, শিশুখাদ্য কেনার শর্ত হিসেবে সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, শিশুখাদ্য কেনার েেত্র পিপিআর ২০০৮-সহ সংশ্লিষ্ট সব নিয়ম ও আর্থিক নিয়ম যথাযথভাবে মানতে হবে। জিটুজি পদ্ধতিতে ক্রয়পূর্বক মিল্কভিটার উৎপাদিত গুঁড়োদুধ চলমান ত্রাণকার্যে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া শিশুখাদ্য হিসেবে খেজুর, বিস্কুট, ফর্টিফাইড তৈল, ব্রাউন চিনি, সুজি, মসুরের ডাল, সাগু, ফর্টিফাইড চাল, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, বাদাম, মানসম্পন্ন তৈরি খাবার স্থানীয়ভাবে কেনা যাবে।
একই সঙ্গে করোনার কারণে সরকারের মানবিক সহায়তা বাবদ ত্রাণ বিতরণের েেত্র সরকারের সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০১২-২০১৩ অনুসরণ করতে হবে। নিরীার জন্য প্রয়োজনীয় হিসাব সংরণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা এলাকায় বেশি সংখ্যক মানুষ বসবাস করেন বিধায় জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দের েেত্র এসব এলাকাকে গুরুত্ব দিতে হবে বলেও সরকারের আদেশে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলম জানিয়েছেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা কর্মহীন মানুষদের তালিকা করছি। এ কাজের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরাও যুক্ত আছেন। তবে ইতোমধ্যে মানবিক সহায়তা বাবদ যে বরাদ্দ পেয়েছি তা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বণ্টন করছি। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দিনরাত কাজ করছেন। ডিসি জানান, এখন পর্যন্ত এ জেলায় কোনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে শুনেছি, নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশ কিছু মানুষ এ জেলায় প্রবেশ করেছেন, যদি তাদের দ্বারা এ জেলায় কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে বিদ্যমান কাজের গতি কমে যেতে পারে বলে।
এদিকে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঈনউল ইসলাম জানিয়েছেন, আমরাও কর্মহীন মানুষদের তালিকা অনুযায়ী মানবিক সহায়তা বাবদ পাওয়া ত্রাণ বণ্টন করছি। এ কাজের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত রয়েছেন। তবে নতুন করে এ জেলায় কোনও বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। তাই আমি কোনও চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাইনি। নেত্রকোনা জেলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা রয়েছে। হাওর অধ্যুষিত জেলা হওয়ায় মাঠ থেকে বোরো উঠতে শুরু করেছে। তাই বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে উভয় ডিসি জানান, এখনও পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণে কোনও সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ েেত্র প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে বলেও জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহম্মদ সাহিন জানিয়েছেন, আমরা মানবিক সহায়তাবাবদ যে বরাদ্দ পেয়েছি তা দিয়েই ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের তালিকা তৈরির কাজও চলছে। এটি চূড়ান্ত হলেও জেলায় পাঠাবো।
এ প্রসঙ্গে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মহীন মানুষদের তালিকা করছি। চূড়ান্ত হওয়া মাত্রই তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হবে। তিনি তা সমন্বয় করে ডিসি অফিসে পাঠাবেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৫০ লাখ ৭০ হাজার কর্মহীন মানুষের একটি তালিকা আমাদের কাছে আছে। ধারণা করছি, সারাদেশে এমন ক্যাটাগরির মানুষের সংখ্যা হতে পারে ৬০ লাখের কাছাকাছি। এ হিসাবটি মাথায় রেখেই প্রতি জেলায় বরাদ্দ দিচ্ছি, যা ডিসিদের নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে বণ্টন করা হচ্ছে। ডিসিরিা সাধারণ মানুষদের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ চাইবেন, তাই তাদের দেওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। খবর : বা/ট্রি