বাঘারপাড়া খবির-উর-রহামান কলেজ: সভাপতির প্রতিহিংসা, বেতন ও বোনাস থেকে বঞ্চিত হলেন ৩০ শিক্ষক কর্মচারী

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মার্চ মাসের বেতন ও বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর খবির-উর-রহমান কলেজের ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী। সমগ্র উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী তাদের বেতন-ভাতা তুলতে পারলেও এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির প্রতিহিংসার কারণে তারা বেতন তুলতে পারেননি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
খবির-উর-রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, জহুরপুরের নরসিংহপুরের বাসিন্দা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মাদ পাটোয়ারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের কয়েকজনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে কোনো শিক্ষক ও পরিবারের লোকজন তার অনুসারী না হলে তিনি তাকে নানাভাবে হেনস্থা করতে থাকেন। সম্প্রতি পূর্ণিমা বিশ্বাস নামে ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষক তার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই শিক্ষকের স্বামীর সাথে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নূর মোহাম্মাদ পাটোয়ারির রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। নূর মোহাম্মাদ পাটোয়ারি বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এমপি গ্রুপের অনুসারী হলেও ওই শিক্ষকের স্বামী আজিজুর রহমান উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তারা দু জন একই এলাকার বাসিন্দা। এ কারণে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সভাপতি নূর মোহাম্মাদ পাটোয়ারির প্রতিহিংসার শিকার হন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমানের স্ত্রী কলেজের ইংরেজি শিক্ষক পূর্ণিমা রানী বিশ্বাস। পূর্ণিমা রানী বিশ্বাস জানান, দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি আমার বিরুদ্ধে কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা একজন ছাত্রকে দিয়ে দেখিয়েছি বলে ঠুনকো অজুহাত তুলে আমাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেন। গত ১৮ মার্চ কলেজের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপের কারণে সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, মার্চ মাসের বেতন উত্তোলনের সর্বশেষ তারিখ ছিলো ১২ এপ্রিল রবিবার। কিন্তু শুধুমাত্র আমার কারণে তিনি বেতন বইতে স্বাক্ষর না করায় কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারী মার্চ মাসের বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পূর্ণিমা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার স্বামী রাজনৈতিকভাবে তার অনুসারী না হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত। এ কারণে তার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আমাকে হয়রানি হতে হচ্ছে’। এ বিষয়ে কলেজের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে কলেজের ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মার্চ মাসের বেতন উত্তোলনের জন্য অধ্যক্ষের নির্দেশে সভাপতির স্বাক্ষরের জন্য তার বাড়িতে গেলে তিনি স্বাক্ষর করেননি। সর্বশেষ গত শনিবার সভাপতির বাড়ি গেলেও তিনি স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দেন। যে কারণে মার্চ মাসের বেতন-ভাতা উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি’।
বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. শামসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সভাপতির স্বাক্ষরের অভাবে আমরা মার্চ মাসের বেতন ও বৈশাখী বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তিনি বলেন, গত ১৮ মার্চ কলেজ পরিচালনা পরিষদের এক সভায় একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এনে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন সভাপতি। এ সময় বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফোনে অনুরোধ করেন। পরে ১৯ মার্চ তার দপ্তরে যেতে বলেন আমাদের। ১৯ মার্চ নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিষয়টি নিয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে নির্বাহী অফিসার অনুরোধ করেন। এরপর থেকে সভাপতি আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখছেন না। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের অজুহাত দেখিয়ে এভাবে বেতন-ভাতা বইয়ে স্বাক্ষর না করা খুবই দুঃখজনক। এ অবস্থায় গোটা শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে’। বিষয়টি নিয়ে কলেজের সভাপতি নূর মোহাম্মাদ পাটোয়ারির সাথে যোগাযোগ করলেও তার সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলা সম্ভব হয়নি। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরই তিনি ফোন কেটে দিয়ে আর রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।