চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম শুকনো খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের দাম। একই অবস্থা শুকনো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও। মানুষ ঘরবন্দি থাকায় একদিকে যেমন বেড়েছে শুকনো খাদ্যপণ্যের চাহিদা, তেমনি অন্যদিকে বাড়তি চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে দামও। আমদানি হ্রাসের জের ধরে সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং মজুদ প্রবণতায় এসব পণ্যের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে মসলা ও শুকনো খাদ্যপণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগই ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে ভারতে ২১ দিনের লকডাউন ও বাংলাদেশে টানা সরকারি ছুটি চলমান রয়েছে। এ কারণে দুই সপ্তাহ ধরে ভারতের বাজার থেকে দেশের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে আমদানি করা শুকনো খাদ্যপণ্যের দাম। এ তালিকায় রয়েছে শুকনো মরিচ, শুকনো হলুদ, মসুর ডাল, চীনাবাদাম, জিরা, মেথি, কালোজিরা, কিশমিশ, লবঙ্গসহ বিভিন্ন পণ্য। আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে এসব শুকনো পণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো ঘুরে গতকাল ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি শুকনো মরিচ ২৩০-২৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। একইভাবে আমদানি করা হলুদের দাম ২৫ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ১২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ভারত থেকে আমদানি করা জিরা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজিপ্রতি। দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০-৯০ টাকা। আমদানি করা মেথির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকায়।
বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে বেশির ভাগ মসলাই। এদিন খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা কালোজিরা বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায়। দাম বেড়েছে কেজিতে ৭০-৮০ টাকা। আমদানি করা লবঙ্গের দাম ৫০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৬৮০ টাকায় উঠেছে। আমদানি করা গোলমরিচ বিক্রি হতে দেখা যায় কেজিপ্রতি ৩৬০ টাকায়। কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা। এদিন ভারত থেকে আমদানি করা দারচিনি কেজিপ্রতি ৩৪০ টাকায় বিক্রি হয়। মসলাটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা।
শুধু ভারত নয় বরং চীন, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা শুকনো পণ্যের দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। এর মধ্যে এলাচের দাম ১০০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৩ হাজার ১৫০ টাকায় উঠেছে। শুকনো ধনিয়া ৫-১০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৮০-৮৫ টাকায়, জয়ত্রী ১০০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকায়, কিশমিশ ১৫ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
দাম বেড়েছে পচনশীল মসলা পণ্যেরও। এদিন ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৩ টাকায়। দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৮ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় উঠেছে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ ৭ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এখানকার পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি আলু ১২-১৩ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল আলুর দাম ৫-৬ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ১৮ টাকায় উঠেছে। তবে আদা ও রসুনের দাম এক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল। এদিন চীন থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১৩০-১৪০ টাকায়। আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
মানুষের মধ্যে মজুদ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় মুড়ির দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে সাদা মুড়ির দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে ৫৭-৫৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। লাল মুড়ির দামও প্রায় সমপরিমাণ বেড়ে ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। চলমান সরকারি ছুটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শুকনো চিড়ার দাম। বর্তমানে ৫০ কেজির একেকটি চিড়ার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা। পণ্যটির দাম বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়েছে।
স্থানীয় মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক কাউসার আলম বলেন, ভারত থেকে পণ্যের আমদানি নেই। সম্প্রতি চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। মুড়ি, চিড়াসহ শুকনো খাদ্যপণ্য বাসা-বাড়িতে পর্যাপ্ত মজুদ প্রবণতায় দাম বাড়তে শুরু করেছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টানা সরকারি ছুটি থাকায় মানুষের মধ্যে মজুদের প্রবণতা বেড়েছে। মানুষ পণ্য বেশি কিনছে। বিশেষত যেগুলো দীর্ঘদিন ঘরে মজুদ রাখা যাবে, এমন শুকনো পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে গেছে। এতে হঠাৎ করেই পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে আমদানি ও সরবরাহ। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে বাড়তে শুরু করেছে শুকনো পণ্যের দাম। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার করা জরুরি।