মুম্বইয়ে বন্ধ ওখার্ড হাসপাতাল : কলকাতায় ৩৯ চিকিৎসক কোয়ারেন্টিনে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা সংক্রমিত রোগীর মৃত্যুর জেরে কলকাতার সরকারি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ৩৯ জন চিকিৎসক সহ ৬৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মৃত রোগী মেডিসিন বিভাগের যে ওয়ার্ড এবং ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এ ভর্তি ছিলেন সেগুলি ৪৮ ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে মুম্বইয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের করোনা সংক্রমিত হওয়ায় ওখার্ড হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কলকাতায় স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, সোমবার থেকেই নীল রতন হাসপাতালের মেডিসিনই বিভাগে নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী দু’দিন জীবাণুমুক্ত করা হবে ওই ওয়ার্ড এবং সিসিইউ। ইতিমধ্যেই ওই বিভাগে কর্মরত এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে মোট ৬৪ জনকে রাজারহাটের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভতি করা হয়েছিল হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলার বাসিন্দা ৩৪ বছরের এক যুবককে। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
শনিবার ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। তবে কোভিড-১৯ উপসর্গ অনুমান করে তার লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পরে সেটি পজিটিভ এসেছে। এরপরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মেডিসিন বিভাগে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চিকিৎসক ও নার্সদের যে ধরণের সতর্কতা নেয়া উচিত ছিল তা তারা নেননি। তবে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেছেন, ওই রোগীকে যখন ভর্তি করা হয়েছিল তখন তাঁর শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না। ফলে কোনও ধরনের স্ক্রিনিং হয়নি। কোনও চিকিৎসক, নার্স বা চিকিৎসাকর্মী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টও ব্যবহার করেননি। শনিবার পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর ওই ওয়ার্ডে এবং সিসিইউ-তে কারা কারা ওই ক’দিন চিকিৎসা করেছেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কারা ছিলেন তা চিহ্নিত করা হয়েছে। জানা যায়, প্রায় ৩৯ জন চিকিৎসক ওই ওয়ার্ড এবং ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন পিজিটি, ৬ জন হাউস স্টাফ এবং ১৮ জন ইন্টার্ন। সবাইকে দ্রুত রাজারহাটের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সংস্পর্শে আসা সব মিলিয়ে প্রায় ৬৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তর সুত্রের খবর, কয়েকদিন আগেই করোনা আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে না রেখে চিকিৎসা করার জন্য হুগলির একটি নার্সিংহোম ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিন করার ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিকে সোমবার তিন জন চিকিৎসক ও ২৬ জন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় মুম্বাইয়ের ওখার্ড হাসপাতালকে সিল করে দেয়া হযেছে। হাসপাতালকে ‘সংক্রামক এলাকা’ (কনটেইনমেন্ট জোন) ঘোষণা করে হাসপাতালে সবার ঢোকা-বেরনো বন্ধ করে দিয়েছে বৃহৎ মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন। ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছে কর্পোরেশন। প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে। হাসপাতালের মধ্যেই এত বিপুল সংখ্যক নার্স ও চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ পুর প্রশাসন। অতিরিক্ত পুর কমিশনার সুরেশ কাকানি বলেছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাস্থ্য পরিষেবার চৌহদ্দির মধ্যে এত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ওঁদের আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। তিনি জানিয়েছেন, কী ভাবে সংক্রমণ ছড়াল, তা নিয়ে একজন স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৭ মার্চে ৭০ বছরের এক করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার দিন দু’য়েকের মধ্যেই ওই বৃদ্ধের দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই নার্সের কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছিল। অভিযোগ, তার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ সতর্কতা নেননি। আক্রান্ত দুই নার্সের সংস্পর্শে আসা বা কোয়ার্টার্সে থাকা তাঁর রুমমেটদের পর্যন্ত কোভিড-১৯ পরীক্ষা বা কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়নি। আক্রান্ত দুই নার্সের ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাকও ছিল না বলে অভিযোগ। এমনকি, কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসার পরেও তাঁদের ডিউটি থেকে সরানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে ইউনাইটেড নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন।