যশোরের কুখ্যাত আল আমিন হত্যাকান্ডের নেপথ্যে আধিপত্য বিস্তার, ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের খড়কিতে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত বড় আল আমিন বালু ব্যবসায়ী নয়, আওয়ামী লীগ আশ্রিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী আক্তারুজ্জামান ডিকুর সহযোগী। স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বিরোধের জের ধরে এ হত্যকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এমনই তথ্য মিলেছে। এদিকে বড় আল আমিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার পিতা বাংলাদেশ ট্যোবাকো কোম্পানির কর্মচারী আলমগীর হোসেন বৃহস্পতিবার ১৯ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এক নারীসহ ১০ জনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন দিনমজুর জানান, খড়কি রেললাইন কলাবাগান ও বামনপাড়ায় কুখ্যাত ডিকু দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উত্যক্তসহ নানাভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছে। এরই জের ধরে এলাকায় তাদের একটি প্রতিপক্ষ গড়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, গত বুধবার দুপুরে খড়কি বামনপাড়ার একটি পক্ষের পিকুল ও মিন্টুসহ কয়েকজন যুবক রেললাইন সংলগ্ন লিটনদের পুকুর পরিষ্কার করে। পরে তারা স্যালো মেশিন নিয়ে পানি সেচ করতে গেলে তাদের বাধা দেয় ডিকু বাহিনীর ক্যাডাররা। এ ঘটনার জের ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিলো। এরই মধ্যে আবার ওইদিন দুপুরে খড়কি পীরবাড়ি রেলগেটে ডিকু পক্ষীয় শামিমকে দেখতে পেয়ে তার সাথে খারাপ আচারণ করে তুলি নামে এক নারী। এ সময় ডিকুর ভাই জিসানকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ির সামনে নামিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলো শামিম।
এ বিষয়ে শামিম জানায়, তাকে দেখামাত্রই তুলি নামে ওই নারী চড়াও হয়। তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘ তুই বড় বাড়া বেড়ে গেছিস। ভালো হয়ে যা।’
তবে তুলির স্বজনদের অভিযোগ, ডিকু বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় নানা অত্যাচার চালিয়ে আসছে। তাদের অত্যাচারের কারণে এলাকায় কেউ ঘর অথবা ছাত্রদের কাছে ঠিকমতো মেস ভাড়া দিতে পারেনা। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খড়কি বামনপাড়ায় তুলি নিজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলো। এ সময় ডিকুর সহযোগী বড় আল আমিন ও ছোট আমিনসহ বেশ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। ফলে সে প্রাণভয়ে দৌড়ে নিজ বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এরপর হামলাকারীরা সেখানে পিকুল ও মিন্টুসহ কয়েকজনকে ধাওয়া করে নিয়ে যায় এবং তাদের কুপিয়ে জখম করে। এরই জের ধরে পিকুল ও মিন্টু পক্ষীয়রা একজোট হয়ে ডিকুর সহযোগীদের ধাওয়া করে। পরে খড়কি রেললাইন কলাবাগান গেটে বড় আল আমিনসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে।
নিহত বড় আল আমিনের পিতা আলমগীর হোসেন জানান, তার ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। কিন্তু কী কারণে তার ছেলে খুন হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না। কারণ, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, গুরুতর জখম বড় আল আমিনকে যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বুধবার গভীর রাতে সে মারা যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ প্রশাসনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বুধবার বিকেল ৪টার দিকে আল আমিন ও তার বন্ধু শামিম মোটরসাইকেলে করে তুলির বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। এ সময় তুলি তাদেরকে দাঁড় করিয়ে মোটরসাইকেল লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং তাদেরকে ওই রাস্তা দিয়ে না চলাচল করার জন্য হুমকি দেয়। এরই জের ধরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে আল আমিনসহ কয়েকজন খড়কি পীরবাড়ি এলাকার জনৈক লুৎফর রহমানের চায়ের দোকানের সামনে অবস্থানকালে তাদের ওপর ফের হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় আল আমিনসহ ৩ জন আহত হয়। পরে আল আমিন মারা যায়। পুলিশ জানায়, বড় আল আমিন খুনের ঘটনায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছে, খড়কির সোবহানের ছেলে জামাল, মিন্টুর ছেলে হিরা ও ইমন, একই এলাকার তুলি, মৃত বাবুর ছেলে শিমুল, মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে টুটুল, মৃত রহমত আলীর ছেলে সিদ্দিক, একই এলাকার পিন্টু, মন্টু, মিন্টু, পিকুল, পিয়াস, রনি, বাপ্পা, বিপুল,মুকুল, জুয়েলসহ আরো দুজন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১০ আসামি তুলি, পিকুল, মিন্টু, মন্টু, মুকুল, বিপুল, শিমুল, ইমন, টুটুল ও সিদ্দিককে বুধবার রাতে আটক করা হয়েছে।