খরচ কমাচ্ছে কোম্পানিগুলো উত্তোলন কমার সম্ভাবনা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥একদিকে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী, অন্যদিকে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মধ্যকার মূল্যযুদ্ধ—এ দুইয়ের জের ধরে রীতিমতো টালমাটাল অবস্থায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আগামীতে তা আরো কমতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য লোকসান এড়াতে ব্যয় কমিয়ে আনার পথে হাঁটছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী বৈশ্বিক জায়ান্টরা। ফলে আগামী দিনগুলোতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন ও সরবরাহ কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী জ্বালানি তেলের বাজারে বড় সংকট তৈরি করেছে। সংক্রমণ কমাতে এরই মধ্যে অনেক দেশ ও অঞ্চল লকডাউনে চলে গেছে। ঘরবন্দি আছেন বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটির বেশি মানুষ। এতে জ্বালানি তেলের চাহিদায় পতন দেখা দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউনের কারণে দেশে দেশে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক গড়ে ২ কোটি টন কমতে পারে। এটা জ্বালানি তেলের বাজারে সংকট আরো জোরদার করবে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন কমিয়ে আনতে চেয়েছিল সৌদি আরব। এজন্য দেশটি রাশিয়াসহ ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোকে প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি রাশিয়া। মার্চের শুরুতে ভিয়েনা বৈঠকে এ প্রস্তাব বাতিল হলে মূল্যযুদ্ধে জড়ায় মস্কো ও রিয়াদ। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৫০ ডলারের ওপর থেকে ৩০ ডলারের নিচে নেমে আসে। এখন করোনা পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে। জ্বালানি তেলের দরপতনের চ্যালেঞ্জ আরো বেড়েছে।
বাজার পরিস্থিতির এমন ভঙ্গুর অবস্থায় চলতি বছর লোকসানের আশঙ্কা করছে জ্বালানি খাতের জায়ান্টরা। সম্ভাব্য লোকসান কমিয়ে আনতে খরচ কমানোর পথে হাঁটছে তারা। সৌদি আরামকো জানিয়েছে, চলতি বছর ব্যয় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি ডলার কমিয়ে আনা হতে পারে। ফরাসি কোম্পানি টোটাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যদি দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৩০ ডলারে অপরিবর্তিত থাকে, তবে কোম্পানিটি ব্যয় ৩০০ কোটি ডলার পর্যন্ত কমিয়ে আনতে বাধ্য হবে। একই সঙ্গে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে পারে ৮০ কোটি ডলারের।
একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে জ্বালানি জায়ান্ট রয়্যাল ডাচ শেল। এক বিবৃতিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজার পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছর ব্যয় কমানো হতে পারে ৫০০ কোটি ডলার। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান সান্তোস জানিয়েছে, লোকসান এড়াতে চলতি বছর ব্যয় হ্রাসের পরিমাণ ৫৫ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৯০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হতে পারে। মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন ব্যয় ২ কোটি ডলার কমাতে পারে বলে জানিয়েছে।
জ্বালানি খাতের বৈশ্বিক জায়ান্টদের এভাবে ব্যয় কমিয়ে আনার প্রভাব পড়তে পারে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে। রয়টার্সের বিশ্লেষক ওয়ান তাও বলেন, ব্যয় কমানো হলে জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তোলন খাতে লাগাম টানতে পারে। নতুন তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে চাহিদা সংকোচন, অন্যদিকে উত্তোলন খাতের সম্ভাব্য মন্দা ভাব জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে। আর এমন হলে স্বল্পমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে পুরো খাতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।
ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স অবলম্বনে