লকডাউনের আশঙ্কায় যশোরে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় বড় বাজারে বিক্রেতাদের হাতে জিম্মি অসহায় ভোক্তারা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ করোনাভাইরাসের বিস্তারে দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় যশোরের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের শিবচর লকডাউন ঘোষণা করায় যশোরেও এর প্রভাব পড়ে। ওই দিনই দলে দলে মানুষ বড় বাজারে ভিড় করতে লাগেন কেনাকাটায়। রীতিমত লাইন পড়ে যায় কে কার আগে পণ্য কিনবেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন চাঁদ রাতের মত অবস্থা। ক্রেতারা বিশেষ করে চাল ডাল আটা আলু পেঁয়াজ তেল ও মসলা কিনতে থাকেন বড় বড় ব্যাগ ভরে। অন্যান্য দিনের মত পণ্যের দরাদরি করতে দেখা যায়নি ক্রেতাদের। এই সুযোগে চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া নিতে কার্পণ্য করেননি বিক্রেতারা।
পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের থাবা বিস্তার করেছে। আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও বহু মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব বিদেশ ফেরত প্রবাসীর অধিকাংশ কোয়ারেন্টাইনে না থেকে দেশের ভেতর ঘোরাঘুরির কারণে অনেকেই করোনা ভাইরাস আক্রমণের সন্দেহের তালিকায় চলে গেছেন। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বড় একটা অংশ শিবচরের বাসিন্দা। সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সতর্কতা হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করেছে। শিবচরের লকডাউনের ঘোষণায় যশোরবাসীর মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। হয়ত যে কোনো সময় যশোর বাজারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কা পেয়ে বসে মানুষের মধ্যে। ওইদিনই সন্ধ্যা থেকেই বড় বাজারে নিত্যপণ্য কেনার লাইন পড়ে যায় ক্রেতাদের। ক্রেতারা বিশেষ করে চাল ডাল আটা তেল আলু পেঁয়াজ ও মসলা বেশি বেশি করে কেনা শুরু করেন। কোন পণ্যের কী দাম সেটা জিঞ্জেস করারও ফুরসৎ মিলছে না। কারণ তার পেছনে আরও অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন যে কোনো মূল্যে এসব পণ্য কেনার জন্য।
অসহায় ক্রেতাদের দুর্বলতার সুযোগে সদ্ব্যবহার করতে ছাড়েননি বিক্রেতারা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে চালের কেজিতে ২ টাকা করে দাম বাড়িয়ে দিলেন বিক্রেতারা। ২০ মার্চ শুক্রবার বিআর-২৮ চাল বিক্রি করেন ৪৪ টাকা কেজি দরে। একদিন আগেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা, আর পাঁচ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকা। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, আর পাঁচ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। বাংলামতি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, আর পাঁচ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা, পাঁচ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩৩ টাকা। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বিক্রেতারা বাড়িয়ে দিয়েছেন ৪ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। দেশি পেঁয়াজ ক্রেতাদের আগ্রহের সুযোগে বিক্রেতারা কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন কোনো কৈফিয়ত ছাড়া। ২০ মার্চ শুক্রবার বড় বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা গত দু দিন আগেও বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলুতেও এ সময় ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নিতে দেখা যায়। এদিন আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি। যা গত চার দিন আগেও ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ও শুক্রবার সকালে বড় বাজারে চাঁদ রাতের মত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। তবে অনেককেই বলতে শোনা যায় চাঁদ রাতে তো শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড় থাকে কেনাকাটায়। এখন তো সব ধর্মের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন একমাসের নিত্যপণ্য কিনে বাড়ি রাখার জন্য। যে কোনো সময় যশোর লকডাউনে চলে গেলে তখন সব দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে মানুষ আগেভাগে কেনাকাটায় নেমে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ক্রেতাদের এক থেকে দু বস্তা চাল, ৫ থেকে ১০ কেজি ডাল, ৫ থেকে ১০ কেজি আটা, ১০ থেকে ১৫ কেজি আলু, ৫ থেকে ১০ কেজি পেঁয়াজ সাথে অন্যান্য মসলাও পর্যাপ্ত পরিমাণে কিনতে দেখা গেছে। কথা হয় একজন ক্রেতা সরকারি চাকরিজীবী মো. জিহাদ হোসেনের সাথে। তিনি জানালেন হঠাৎ করে দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। তিনি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাজার বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় নিত্যপণ্য বেশি বেশি করে কিনে রাখছেন বলে জানান। বেশিরভাগ দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো নেই। ক্রেতাদের নিত্যপণ্য কেনার আগ্রহের কারণে বিক্রেতারা ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছেন। এ বিষয়ে যশোর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব শুক্রবার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘বিক্রেতারা ইচ্ছেমত দাম নিতে পারবে না, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি, যেসব দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো নেই এবং যারা ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদার সুযোগে পণ্যের দাম বেশি নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’