মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে সাংবাদিককে জেলে পাঠাল ভ্রাম্যমাণ আদালত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করে এক বছর জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তার বাড়ি থেকে ৪৫০ এমএল দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়েছে বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত জানায়। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেয়ার বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ওই সাংবাদিকের কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়াস্থ বাড়ি থেকে আটকের পর দণ্ডাদেশ দিয়ে রাতেই তাকে জেলহাজতে পাঠান হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেেিত পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে সে দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ কে বা কারা দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমার স্বামী ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানান। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। পরে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য আমার কাছে নিয়মিত পুলিশ ফোর্স চাওয়া হয়। শুক্রবার রাতেও তারা লিখিতভাবে চেয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী পুলিশ পাঠান হয়েছিল। সেখানে কী হয়েছে আমার জানা নাই’। এ দিকে আরিফুল ইসলামকে মারধর করতে করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পোশাক খুলে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। পুরো দৃশ্য ভিডিও করা হয়েছে। আর এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন। এমনটাই অভিযোগ করেন তার স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু। শনিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম কারাগারে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী দেখা করতে গেলে তিনি এসব তথ্য জানান। আরিফুল ইসলাম স্ত্রীকে জানান, মধ্যরাতে তাকে বাসা থেকে জোর করে তুলে আনার পথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত লাথি-থাপ্পড়, ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্যান্ট ও গেঞ্জি খুলে তাকে উলঙ্গ করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এসব দৃশ্য ভিডিও করা হয় বলে জানিয়েছেন আরিফুল। তিনি আরও জানান, যারা তাকে নির্যাতন করেছে, তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তাদের দেখতে না পারলেও তাদের সবার গলার স্বর তার মনে আছে। মোস্তারিমা সরদার নিতু আরও জানান, ‘আমার স্বামী খুবই অসুস্থ। সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলার মতো শক্তি ছিল না তার।’
অপরদিকে মধ্যরাতে টাস্কফোর্স অভিযানের নামে কাউকে তুলে নিয়ে মোবাইল কোর্টে তার শাস্তি দেওয়া যায় কীভাবে, তার আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন। তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগের েেত্র গ্যাপ থাকলে দেখা হবে।’ বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাস্কফোর্সের অভিযান ছিল। এটা ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করেছে রেগুলার শিডিউলের অধীনে। সঙ্গে মাদকদ্রব্য অধিদফতরের লোক, পুলিশ, আনসার ছিল।’ টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্ট আইনে সাজা দেওয়া ঠিক আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনের মধ্যে হয়েছে। তারা সংুব্ধ হয়ে থাকলে আপিল করবে, দেখবো আমরা।’ একটি পুকুর নিজের নামে নামকরণ করা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের কারণে ুব্ধ হয়ে আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এরকম পদপে নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো এক বছর আগের ঘটনা। আর রিপোর্টটিও মিথ্যা। এরকম কিছু হলে তো তখনই হতো। আর এই রিপোর্টের জন্য তো সে স্যরি বলেছে। আমরা ভিনডিকটিভ (প্রতিহিংসাপরায়ণ) না।’ এ ঘটনায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল গাফফার খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কুড়িগ্রামে চলে গেছেন বিষয়টি তদন্ত করতে। অবশ্যই টাস্কফোর্স গঠন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার একটি টাইম ফ্রেম দেওয়া আছে। সেটি অমান্য করা সরকার ও প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর। আমি কথা দিচ্ছি, আরিফের ওপর কোনও অন্যায় অবিচার হবে না।’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের ওপর যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমি এখনি খোঁজ খবর নিচ্ছি।’