তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী বললেন- আমারই জন্ম সনদ নেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়ে ভারতে যখন তীব্র বিতর্ক তখন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্র শেখর জানালেন তার নিজেরই জন্ম সনদ নেই। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আমার নিজেরই যখন জন্ম সনদ নেই, সেখানে কিভাবে আমি আমার পিতার জন্ম সনদ পাবো? শনিবার তিনি রাজ্যের বিধানসভায় এ প্রশ্ন তুলেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ। তিনি এদিন এনপিআরের নতুন ফরমেট নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, যা ১লা এপ্রিল থেকে সামনে আনার পরিকল্পনা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ বিষয়ে ৬৬ বছর বয়সী এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমি তো জন্মেছিলাম এক গ্রামে। তখন সেখানে কোনো হাসপাতাল ছিল না। গ্রামের মুরব্বিরা একটি ‘জন্মনামা’ লিখে রেখেছিলেন।
তাতে কোনো অফিসিয়াল সিল নেই। যখন জন্মেছিলাম, তখন আমাদের ছিল ৫৮০ একর জমি এবং একটি দালান। যখন আমিই আমার জন্ম সনদ দিতে পারছি না, তখন কিভাবে দলিত শ্রেণির মানুষ, উপজাতি ও গরিবরা তাদের জন্ম সনদ জমা দেবেন!
তেলেঙ্গানার এই মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, পুরনো দিনে ধর্মীয় নেতাদের কাছে সন্তানের রাশিফল জানতে চাইতেন মুরব্বিরা। সেটাকেই জন্ম সনদ হিসেবে দেখা হতো। এর ওপর কোনো স্ট্যাম্প বসানো থাকতো না। এমনকি আজও আমার রাশিফল সম্পর্কিত ডকুমেন্ট আছে। সেটা আমার স্ত্রীর সাথে। এ ছাড়া আমার কাছে কোনো ডকুমেন্ট নেই। যখন আমারই জন্ম সনদ নেই, তখন যদি আমাকে আমার পিতার জন্ম সনদ দিতে বলা হয়, তখন কি আমার মরে যাওয়া উচিত নয়?
তেলেঙ্গানার এই মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, তার দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির কিছু প্রতিশ্রুতি এবং মূলনীতি আছে। এগুলোর সঙ্গে তার দল কখনো সমঝোতা করবে না। এ সময় তিনি নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের সমালোচনা করে একে সংবিধান বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, এটা দেশের সংবিধানের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে। এই সংবিধান সব নাগরিককে ধর্ম, গোষ্ঠীর বিভাজন থেকে বেরিয়ে সমান অধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সংবিধানের একেবারে প্রথম দিককার বাক্যেই বলা হয়েছে, এই সংবিধান কোনো ধর্ম, গোষ্ঠী বা ধর্মমতের বাইরে। এরপরই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কিন্তু তারা এখন একটি বিশেষ ধর্মকে বাদ রাখার কথা বলছেন। তাদের এ যুক্তি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ যুক্তিতে আমরা সম্মত নই। শুধু আমরাই না, কোনো সভ্য সমাজ এটাকে মেনে নিতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, তেলেঙ্গানা বিধানসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং এনপিআর নিয়ে বিতর্ক হবে। এরপর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি প্রস্তাব পাস হবে। এর মধ্যদিয়ে পুরো দেশের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া হবে।