করোনায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন পোশাক শিল্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) ক্ষতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বিঘ্নিত হওয়া এই ক্ষতির প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন, কারখানার মালিক ও অর্থনীতিবিদরা। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে তিন মাসের কম সময়ে ৩ হাজারের বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে কভিড-১৯। আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে এখনো ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত না হলেও এর প্রভাব পড়েছে দেশটিতে। ভাইরাসটি প্রথমে ধরা পড়ে চীনের উহানে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালের প্রধান সরবরাহকারী হচ্ছে চীন। সেখানেই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি। বন্ধ রয়েছে বাণিজ্য। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চীনে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাপক আকারে বিঘ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কী পরিমাণে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। রহমান আরএফএ’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেনার নিউজকে বলেন, ভাইরাসটি সংক্রমণের পর অন্যান্য দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, চীনের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির নতুন বাজার খোঁজা যেতে পারে। কিন্তু যখন ক্রেতা আর চাহিদাই নেই তখন পণ্য তৈরি করে লাভ কী? বিজিএমইএ’র তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে পোশাক শিল্প থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪১০ কোটি ডলার। ২০১৪ সাল থেকে বার্ষিক হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশই আসছে এ খাত থেকে। বিশ্বব্যাংক’র তথ্য অনুসারে, পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
বাংলাদেশে এখনো করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়নি। ভাইরাসটি ইতিমধ্যে ৭৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনো এর কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রতিবেশী একাধিক দেশে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করেছে। এ ছাড়া, ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে এমন দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাংক অনুসারে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান ক্রেতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স। দেশগুলো বারবার বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির জন্য পোশাক শিল্পের বাইরে তাদের অর্থনীতির বিস্তার করতে চাপ দিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে আছি। এর জন্য আমরা জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনা ভাইরাস পোশাক শিল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মে মাসের আগে দেশের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা জানি না চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কতদিন স্থায়ী হবে। ঢাকা-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ভাইরাসটির প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। আসলে, পশ্চিমা দেশগুলোয় গ্রীষ্মকালের জন্য পণ্য তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। কিন্তু এই অর্ডারগুলো আগামী বর্ষায় রপ্তানি হবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কারখানাগুলো প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি করে থাকে, বেশিরভাগই চীন থেকে। এই কাঁচামালগুলো অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা কঠিন।
অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও, একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগও নিয়ে এসেছে করোনা ভাইরাস। মানসুর বলেন, চীনের অবরুদ্ধ অবস্থায় পুরো বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই চীন থেকে তাদের কারখানা সরিয়ে নিতে চাইবেন। আমরা সে সুযোগ ছিনিয়ে নিতে পারি। ঢাকাস্থ নিটভ্যালি লিমিটেডের মালিক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তার কারখানায় বোনা পোশাকের উৎপাদন ২০ শতাংশ কমে গেছে। অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। তিনি জানান, তার কারখানায় পণ্য উৎপাদনের সুতা, কটন ও রাসায়নিক পদার্থসহ অন্যান্য কাঁচামালের ৫০ শতাংশই আমদানি হয় চীন থেকে। ওয়াদুদ বলেন, প্রথমত, কিছু ক্রেতা এখন চীন থেকে আমদানি করা সুতা ও কটনের তৈরি কাপড় কিনতে নারাজ। একই সময়ে, বাংলাদেশ সরকারও চীন থেকে আমদানির ওপর কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাব ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারগুলোর মতো তীব্র হবে না বলে মনে করেন ওয়াদুদ। সেগুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান বাজার। তিনি বলেন, চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় ভাইরাসটি মোকাবিলার সক্ষমতা বেশি রয়েছে।