পেঁয়াজ চাষিরা উদ্বিগ্ন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। প্রায় ছয় মাস পর এই নিষেধাজ্ঞা তুললো দেশটি। তবে এই খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের পেঁয়াজ চাষিরা। ভালো দাম পাওয়ার আশায় অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন তারা। অনেকের পেঁয়াজ এখনও মাঠে রয়েছে, আবার অনেকের পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। তাদের আশঙ্কা, ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে এখন ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করবে। ফলে তারা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যয্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। লোকসানের মুখোমুখি হবেন তারা। এ কারণে অন্তত আরও ২/৩ মাস পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ার দাবি তাদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক পেঁয়াজ চাষীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষী মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, ‘শুনলাম ভারত নাকি পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এর ফলে এখন হুরমুর করে দেশের বাজার ভারতীয় পেঁয়াজে ভরে যাবে। আর আমরা লোকসানের কবলে পড়বো। অতীতে এই মৌসুমে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে পেয়েছি ১৫ থেকে ১৭ টাকা। এবছর ভালো দামই পাচ্ছিলাম। প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ মাঠেই বিক্রি করেছি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কিন্তু হঠাৎ করে বাইরের পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে তো দাম আগের দরে চলে যাবে। তখন তো আমরা লোকসানের মুখে পড়বো।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এবছর অতীতের বছরগুলোর তুলনায় বেশি দামে পেঁয়াজের বীজ কিনতে হয়েছে। একইভাবে এবছর েেত কাজ করার শ্রমিককেও বেশি দাম দিতে হয়েছে। তারপরও উৎপাদিত পেঁয়াজের যে দাম পাচ্ছিলাম, তাতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালোই দাম হাতে এসেছে। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে সেই দাম যদি পড়ে যায় তাহলে তো আমরা মাঠে মারা যাবো। ভালো দামের আশায় ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি।’ প্রায় একই কথা বলেছেন অপর পেঁয়াজ চাষী কেরামত আলী। তিনি জানিয়েছেন, ‘ভালো দামের আশায় বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এতে খরচও আগের যে কোনও সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। এখন যদি আবার সেই আগের মতো ১৫ টাকা ১৭ টাকা কেজি দরে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয় তাহলে তো মরে যাবো। অন্তত আরও ২/৩ মাস সরকার যাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেয় সে দিকটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
এদিকে রাজধানীর আমদানিকারক হাজী আবদুল মজিদ বলেন, ‘ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে আমরাও তিগ্রস্ত হবো। কারণ ভারতের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনও রয়েছে আমাদের গুদামে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু করলে এগুলো কে কিনবে? এ অবস্থায় আমাদের দিকটি সরকারের বিবেচনা করা উচিত।’ বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে দাম কমে যাবে। তবে সেটি যদি অতি মাত্রায় কমে যায় তাহলে উৎপাদনকারী কৃষক, আমদানিকারক সবাই তিগ্রস্ত হবেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম ২৬০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, ‘কোনোভাবেই দেশের কৃষকদের লোকসানের কবলে পড়তে দেওয়া যাবে না। কৃষক যাতে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি আগ্রহী হয় সে বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে।’
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ‘ভবিষ্যতে ভারতের ওপর পেঁয়াজ নিয়ে নির্ভর করা ঠিক হবে না। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই পথ, সেটা হলো পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। সরকার সেভাবেই পদপে নিচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকার সেই পদপে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি করার স্বপ্ন দেখছে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জানিয়েছেন, ‘এখনও সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।’