আবেদনেও মিলছে না ইভিএম’র ফল

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে নেয়া ভোটের রেজাল্টের প্রিন্ট কপি পেতে নানা বিড়ম্বনায় প্রার্থীরা। নিজেদের প্রাপ্ত ফলাফল জানতে অনেকেই লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ইসিতে। তবে গেজেট প্রকাশ হওয়ায় এটি আর দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী ফল চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যেতে হলে নির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক ফলের কপির প্রয়োজন হয়। সূত্রমতে, দুই সিটি নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে দুই সিটির কমপক্ষে ৩০ কাউন্সিলর প্রার্থী। কেন্দ্রে ইভিএমের ফল বুঝিয়ে না দেয়া, ভোটের ফলাফল নিয়ে গরমিল, ভোটের দিন এজেন্ট বের করে দেয়াসহ একাধিক অভিযোগে এসব ওয়ার্ডে পূনঃনির্বাচনের দাবি তুলেছেন তারা। এদিকে প্রার্থীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে তড়িগড়ি করে মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ীদের নাম, ঠিকানা, পদসহ গেজেট প্রকাশ করেছে কমিশন। এতে করে কমিশনে অভিযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। তবে আদালতের মাধ্যমে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবে।
কিন্তু আদালতে যেতে হলে প্রয়োজন পড়বে ফলাফলের প্রিন্ট কপি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর মেয়র বা কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সরকার বা সরকারের মনোনীত কর্তৃপক্ষ মেয়র ও সব কাউন্সিলরের শপথগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। কারচুপির অভিযোগে দক্ষিণ সিটির ৩১ নং ওয়ার্ডের ফলাফল স্থগিত করার পর থেকে নড়েচড়ে বসেন হেরে যাওয়া অন্য প্রার্থীরাও। নিজেদের প্রাপ্ত ভোট নিয়ে তারাও সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তাদের দাবি রিটার্নিং ও সহকারি রিটানির্ং কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে ফল পরিবর্তন করেছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ খান। মানবজমিনকে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত টিফিন ক্যারিয়ার পদপ্রার্থী আবুল কাশেম ও তার সহযোগীরা আমাদের এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। ভোট জালিয়াতি করে তিনি একক ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে সহযোগিতা করেছে প্রিজাইডিং অফিসার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন। মাসুদ খান বলেন, মোহাম্মদপুর পিসি কালচার ১২ নম্বর রোডে ৩১ নং কেন্দ্রে আমি ১০৭ ভোট পেয়েছি কিন্তু সেখানে আমাকে ১৯ ভোট দেখানো হয়েছে। ৪০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০ কেন্দ্রের ফল পেয়েছি বকি ৩০ কেন্দ্রের ফলাফল আমাকে জানানো হয়নি। একজন প্রার্থী হিসাবে এটা আমার জানার অধিকার আছে। আমি নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু তারা আমলে না নিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে ইভিএমের ফল জানতে গিয়েছিলাম। তারাও গুরুত্ব দেয়নি। বলেছে ৩০নং ওয়ার্ডের ফল নিয়ে নাকি ঝামেলা আছে তাই এখন জানানো যাবে না। একমাস পর যোগাযোগ করতে বলেছে। কিন্তু একমাস পরে তো প্রার্থীরা শপথ গ্রহণ করবে। আমি জিতি বা হারি তা নিয়ে আমার দুঃখ নেই, আমি আমার সঠিক ফল দেখতে চাই। এদিকে উত্তর সিটির ৩১ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী আলেয়া সরোয়ার ডেইজি মানবজমিনকে বলেন, কোন কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। ভোটারদের বাধা দিয়েছে। আমি দুটি কেন্দ্রের ইভিএমের প্রিন্ট কপি ফলাফল পেয়েছি। বাকি কেন্দ্রের ফল এখনো পাইনি। নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে গিয়েছিলাম, তারা পরে আসতে বলেছে। রোববার আবারও যাবো, আমি আমার ইভিএমের ফলাফল জানতে চাই। ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সম্পাদক ওয়ালিউল্লা মাস্টার বলেন, ভোটের দিন আমি দলীয় ভাবে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছিলাম। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ কেন্দ্রে আলেয়া সরোয়ার ডেইজির ফল জানতে গিয়েছিলাম। এখানে দুটি ভোট কেন্দ্র ছিলো একটি মহিলা অন্যটি পুরুষ। পুরুষ কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি দেয়া হলেও মহিলা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়নি। প্রিজাইডং অফিসার বলেছে এটা দেয়া নাকি বেআইনি, আমি বললাম, তাহলে পুরুষ কেন্দ্র কিভাবে দিল? এসময়ন সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা আমার হাত থেকে পুরুষ কেন্দ্রের ফলাফলের কপিটাও কেড়ে নিয়ে যায়। তারা বলে, উনারা বেআইনি কাজ করেছে, এটা দেয়া যাবে না।
সংরক্ষিত-১১ ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, আমি আমার প্রাপ্ত ভোট জানতে এসেছিলাম। কিন্তু তারা জানাতে টালবাহানা করছে। এছাড়া উত্তর সিটির ৭নং ওয়ার্ডের প্রার্থী কাজী স্বপন আলী, ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডের ঘুড়ি প্রতিকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো.তাজউদ্দিন আহমেদসহ অনেক প্রার্থীই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ইভিএমের প্রিন্ট কপি এখন দেখানোর কোন সুযোগ নেই। ফলাফল যে বস্তায় রাখা হয়েছে তা এখন আর আমাদের খোলার সুযোগ নেই। যখন কেন্দ্রে ছিলো তখন তারা কেন দেখলো না? তখন যদি প্রার্থীরা প্রিজাইডিং অফিসারকে বলতো তাহলে তারা দেখাতে পারতো। তবে তারা চাইলে আদালতে আবেদন করতে পারবে। আদালত বললে আমরা অবশ্যই দেখাবো।
ইভিএম নিয়ে ইসির ভিন্ন চিন্তা: সম্প্রতি শেষ হওয়া ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচন কমিশনকে হতাশ করেছে। সিটি নির্বাচনে ভোট কম পড়ার কারণ খুজতে ভিতরে-বাইরে চলছে আলোচনা। এদিকে গুঞ্জন উঠেছে, ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেনা নির্বাচন কমিশন, তাই ভবিষৎতে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট পেপারেও ভোট নেয়ার কথা ভাবছে ইসি। নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার আভিশাপ থেকে বাঁচতে বিকল্প ভোট গ্রহণের মাধ্যম হিসাবে ইভিএমকে বেছে নেয় ইসি। ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ আসনে উপনির্বাচন তারিখ ২১ মার্চ নির্ধারণ করেছে ইসি। এ নির্বাচনে ঢাকা ১০ (শাহাবাগ-ধানমন্ডি) আসনের উপনির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাগেরহাট ৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) ও গাইবান্ধা ৩ (পলাশবাড়ী-সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ব্যালটের মাধ্যমে। এই নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ তারিখ ৩রা ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২৪ থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ২৮শে ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯শে ফেব্রুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ১ মার্চ ও ভোট গ্রহণ ২১ মার্চ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তবে সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট পেপারও রাখা হতে পারে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ও বগুড়া-১ এবং যশোর-৬ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি কমিশন বৈঠক হবে। এদিন এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করেছিল ইসি। এ সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।