বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে ৩.৪% প্রবৃদ্ধি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিদায়ী বছরে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। এ সময় বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন ১৮৭ কোটি টনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এর মধ্য দিয়ে টানা চার বছর ধরে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মূলত বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির জের ধরে ইস্পাতের উৎপাদন খাতেও চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। তবে গত বছর দূরপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার দেশগুলোয় ইস্পাত উৎপাদন বাড়লেও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে পণ্যটির উৎপাদন সংকুচিত হয়ে এসেছে। খবর রয়টার্স ও মেটাল বুলেটিন।
ডব্লিউএসএর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ১৮৬ কোটি ৯৯ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে ১৮০ কোটি ৮৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে ৬ কোটি ১৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন খাতে মন্দা ভাব দেখা গিয়েছিল। এর পর থেকে বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে টানা প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।
বিদায়ী বছরে এশিয়ার দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ১৩৪ কোটি ১৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯৯ কোটি ৬৩ লাখ টনে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে দেশটি সব মিলিয়ে ৯২ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদন করেছিল। বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে গত বছর চীনের হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশে। এর আগের বছর চীনের হিস্যা ছিল ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত বছর ভারতে সব মিলিয়ে ১১ কোটি ১২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ সময় জাপানে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৯ কোটি ৯৩ লাখ টনে নেমে এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় গত বছর ৭ কোটি ১৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম।
বিদায়ী বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোসহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় সব মিলিয়ে ১২ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এসব দেশে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ৭৯ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিআইএ বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় বিদায়ী বছরে ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৪ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ কম। এ সময় রাশিয়ায় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন দশমিক ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১৬ লাখ টনে। ইউক্রেনে গত বছর ২ কোটি ৮ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কম।
ডব্লিউএসএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মধ্যপ্রাচ্যে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এ সময় আফ্রিকার দেশগুলোয় ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১ কোটি ৭০ লাখ টনে নেমেছে। আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এ সময় ব্রাজিলে ৩ কোটি ২২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। ওশেনিয়ায় পণ্যটির উৎপাদন ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৬১ লাখ টনে নেমেছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো গত বছর সম্মিলিতভাবে ১৫ কোটি ৯৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কম। এ সময় জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিসহ ইইউভুক্ত বেশির ভাগ দেশে ইস্পাত উৎপাদন কমেছে।