মৌসুমের শেষে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা আরও কমার আভাস আবহাওয়া অফিসের

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর ফলে এ অঞ্চলে কনকনে ঠান্ডার সাথে বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস। এতে তাপমাত্রা যতটা কম তার চেয়ে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি শীত মৌসুমে এটি সর্বশেষ শৈত্যপ্রবাহ। দু’একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিদায় নিতে থাকবে শীত। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত তিনদিন ধরে এ অঞ্চলে ১ ডিগ্রি করে তাপমাত্রা কমছে। বৃহস্পতিবার যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার ১ ডিগ্রি কমে রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আজ শনিবার তাপমাত্রা আরও ১ ডিগ্রি কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। তিনি বলেন, গত তিনদিন ধরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এরপর এর প্রভাব পড়ছে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলে।
এদিকে শীতের প্রকোপে মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। মানুষ সকালের দিকে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কর্মক্ষম খেটে-খাওয়া মানুষের কষ্ট হচ্ছে বেশি। সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। দূরপাল্লার বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন সকালেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। শুক্রবার সকালে যশোর উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। তারা জানান, হঠাৎ শীত জেঁকে বসায় মানুষের কষ্টও বেড়ে গেছে। সুরাইয়া কাকলী নামে এক স্কুল শিক্ষিকা বলেন, সকালে শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। তারপরও বের হতে হচ্ছে। শুক্রবার বন্ধের দিন বাবার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে বেড়াতে যাবো। তাই পরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। একই স্থানে কথা হয় আজের আলী নামে এক রিকশাচালকের সাথে। তিনি বলেন, শীত বেশি। সহ্য করা যাচ্ছে না। রিকশা চালাতে গেলে হাত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু শীতের কারণে সকালের দিকে প্যাসেঞ্জার কম হচ্ছে। এদিকে মৌসুমের শেষ শৈত্যপ্রবাহ যখন চলমান তখন এ অঞ্চলে মাঠে মাঠে চলছে বোরো ধান লাগানোর প্রস্তুতি। অধিকাংশ এলাকার মাঠে এখন ক্ষেত প্রস্তুত করছেন কৃষক। কোথাও কোথাও জমিতে রোপনের কাজও চলছে। এসব কৃষক শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে নাকাল হয়ে পড়ছেন। যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ’শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা প্রথমে বীজতলা নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়ি। মাত্র দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর দুটি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ায় কোল্ড ইনজুরিতে কিছু বীজতলার ক্ষতি হয়। তবে শৈত্যপ্রবাহ বেশি বিলম্বিত না হওয়ায় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পেরেছি আমরা। এখন আবার নতুন করে শৈত্যপ্রবাশ হওয়ায় ভয় করছে। জানি না এর স্থায়ীত্ব কতদিন থাকে’। তবে এ বিষয়ে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, বোরো চাষিদের জন্য আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যে যশোরে যেসব বীজতলা রয়েছে তার চারা অনেক বড় হয়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত শীত ও কুয়াশা এসব ধানের চারা নষ্ট করতে পারবে না। শৈত্যপ্রবাহ একটু বিলম্বিত হলে ধানের চারা হলুদ রঙ হতে পারে। তবে এর ট্রিটমেন্ট দেয়ার ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।