চৌগাছা পুড়াপাড়ার চাতালগুলোতে ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিক

0

 

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোর চৌগাছার ‘চাতালের হাট’ হিসেবে খ্যাত পুড়াপাড়ার চাতালগুলোতে চাল তৈরির কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এবছর বোরো মৌসুমে চাল তৈরির কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। তবে আবহাওয়া ভাল থাকলে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করছেন।
চাতাল অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। এই চাতালের কারণেই বর্তমান সময়ে গাঁয়ের বধূদের অনেক কষ্ট কমেছে। সময়ের ব্যবধানে চাতালের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে অটো রাইস মিল। এতে আরও সহজ হয়েছে চাল তৈরি। ৩০/৩৫ বছর আগে থেকে চৌগাছার পুড়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা চাতাল ব্যবসা শুরু করেন। দিন যত যায়, এই বাজারে চাতালের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে পুড়াপাড়া বাজার ও এর আশপাশে ৬০ থেকে ৬৫টি চাতাল গড়ে উঠেছে। এসব চাতালে ৪/৫’শ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে সারা বছর ধরে চলে ধান সিদ্ধ আর চাল তৈরির কাজ। তবে বোরো ও আমন মৌসুমে একটানা ৩ মাস ধরে চাল তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল দুপুরে পুড়াপাড়া বাজার ও বাজারের অদূরে বেশ কয়েকটি চাতাল ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকদের যেন দম নেয়ার সময় নেই। মাথার উপর প্রচন্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমকে উপেক্ষা করে তারা ধান শুকাতে ব্যস্ত। দিনে ও রাতে হঠাৎ হঠাৎ করে আবহাওয়া তার রুপ পরিবর্তন করছে, তাই চাতালে ফেলে রাখা ধান শুকিয়ে মিলে না তোলা পর্যন্ত তাদের স্বস্তি নেই। ধান শুকানোর কাজে নিয়োজিত বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার মো. মানিক, নজরুল ইসলাম, সুমি খাতুন বলেন, ইরি মৌসুম এলে কাজ কিছুটা বেড়ে যায়। বৃষ্টি না হলে কাজ অনেকটাই এগিয়ে যেত, এখন বৃষ্টি থেমেছে তাই আমাদের কাজও বেড়ে গেছে।
আলী কদর, মুসা খা, আব্দুল আলিম, মিলন হোসেন, নুর নবি, আব্দুল গনি, মিজানুর রহমানসহ একাধিক চাতাল মালিক বলেন, চাতাল ব্যবসার কারণে পুড়াপাড়ার পরিচিতি এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। তবে বেশ কয়েকটি অটো রাইস মিল হওয়ার কারণে চাতাল ব্যবসায় কিছুটা মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। তারপরও যুগ যুগ ধরে চলে আসা ব্যবসা মন্দা হলেও অনেকেই টিকিয়ে রেখেছেন। চাতাল মালিক আলী কদর বলেন, এবছর বোরো মৌসুমে আকস্মিক বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে যে সব ধান আসছে তা থেকে খুব ভালো মানের চাল তৈরি হবে। তিনি বলেন, তার চাতালে প্রায় ৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। একবারে ২’শ থেকে আড়াই’শ মন ধান সিদ্ধ করা হয়। ওই ধান চাতালের জায়গায় শুকিয়ে মিলে নিয়ে চাল তৈরি করা হয়। পুড়াপাড়া চাতালে তৈরি চাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতে যায়। চাতাল ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, উৎপাদন ব্যয় কমানো ও পর্যাপ্ত শ্রমিক পেলে পুড়াপাড়া হয়তো পরিচিতি পেত চাল তৈরির রাজধানী হিসেবে।