গমের রফতানি বাজারে রাশিয়ার একক আধিপত্য

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও কৃষিপণ্যটির রফতানিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে রাশিয়া। এ খাতে দেশটির ধারে কাছেও নেই অন্য কেউ। ফলে রফতানি বাজারে রুশ আধিপত্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গমের দাম নির্ধারণে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে রাশিয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হলে কিংবা যেকোনো কারণে দেশটি থেকে রফতানি বাড়লে বা কমলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দামে উত্থান-পতন দেখা যায়। এ পরিস্থিতি বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের বাজারে রাশিয়াকে শক্তিশালী ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা রাখতেও উৎসাহিত করে।
রাশিয়া বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশ। তবে কৃষিপণ্যটির রফতানি বাজারে শীর্ষ অবস্থানের কারণে দেশটি বেশি আলোচিত। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন হতো। ওই সময় গমের রফতানি বাজারেও সোভিয়েতের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় ছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর গমের উৎপাদন ও রফতানিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে রাশিয়া। এ খাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর উত্থান ঘটে। একপর্যায়ে গম রফতানি খাতে ইইউভুক্ত দেশগুলোর কাছে শীর্ষ অবস্থান হারায় রাশিয়া। তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটি। নতুন করে গমের শীর্ষ রফতানিকারক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তারা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একচেটিয়া আধিপত্য। এখন রাশিয়া থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ গম রফতানি হয়, তা বাজারে কৃষিপণ্যটির দাম নির্ধারণে প্রভাব রাখতে যথেষ্ট। গম রফতানিতে রাশিয়ার ধারে কাছেও নেই ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালেও রাশিয়ার তুলনায় ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে বেশি গম রফতানি হয়েছে। ওই সময় ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টন গম রফতানি করেছিল। আর রাশিয়া রফতানি করে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম। পরের বছরই পরিস্থিতি বদলে যায়। ইইউকে টপকে শীর্ষ গম রফতানিকারকের স্বীকৃতি পুনরুদ্ধার করে রাশিয়া। ২০১৬ সালে দেশটি থেকে ২ কোটি ৭৮ লাখ ১৫ হাজার টন গম রফতানি হয়। ইইউ রফতানি করেছিল ২ কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার টন গম।
এর পর আর পেছন ফিরে তাকায়নি রাশিয়া। প্রতি বছরই গমের রফতানি উত্তরোত্তর বাড়িয়েছে দেশটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে রাশিয়া থেকে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার টন গম রফতানি হয়েছে। এ সময় ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ২ কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার টন গম রফতানি করেছে। আর শীর্ষ রফতানিকারকদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি হয়েছে ২ কোটি টনের কিছু বেশি গম।
বিদায়ী বছরে রাশিয়া সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টন গম রফতানি করেছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। আগের বছরের তুলনায় রফতানি ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমলেও শীর্ষ রফতানিকারকের তকমা ধরে রেখেছে দেশটি। গত বছর ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ২ কোটি ৯০ লাখ টন গম রফতানি করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ সময় রফতানি হয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৫৫ হাজার টন গম।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক রফতানি বাজারের ২০ শতাংশের বেশি হিস্যা রাশিয়া একাই নিয়ন্ত্রণ করবে। অনুকূল আবহাওয়ায় বাড়তি উৎপাদন ও তুলনামূলক কম উৎপাদন ব্যয় গমের রফতানি বাজারে রাশিয়ার একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখতে সহায়তা করছে। এ আধিপত্য ধরে রাখতে চলতি শতকের শুরুর তুলনায় গম উৎপাদন বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে রাশিয়া। উৎপাদন বাড়তে থাকলে আগামী দিনগুলোতেও গমের রফতানি বাজারে রুশ আধিপত্য বহাল থাকতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্যটির দাম নির্ধারণেও অন্যতম প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখবে রাশিয়া।