পৌনে ৫ বছরে সর্বোচ্চ দরপতন পুঁজিবাজারে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ব্যাপক দরপতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৫৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩১৩টির বা ৮৮ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের দরপতন হয়েছে। সামান্য দর বেড়েছে ২১টি শেয়ারের, যা লেনদেন হওয়া শেয়ারগুলোর ৬ শতাংশেরও কম।
এমন দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনেই প্রায় ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১১ শতাংশ পতন হয়েছে। সূচকটি ফিরে গেছে পৌনে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে। সোমবার সূচকটির সর্বশেষ অবস্থান ছিল ৪ হাজার ১২৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। পৌনে ৫ বছর আগে ২০১৫ সালের ৭ মে সূচকটির সর্বনিম্ন অবস্থান ছিল ৪১২২ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
এছাড়া শতাংশের বিচারে এদিনের সূচকের পতন ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ। ওইদিন সূচকটি ৯৭ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৯৪ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নেমেছিল।
গত সপ্তাহেও দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছিল। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের সব দিনেই বড় দরপতনে ডিএসইএক্স সূচকের পতন হয়েছিল ২৬২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত পৌনে ৮ বছরে এক সপ্তাহে এত বড় পতন আর কখনও হয়নি।
তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে রোববার বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়েছিল। কিন্তু সূচক ২৬২ পয়েন্ট পতনের পর ফিরে পেয়েছিল মাত্র ১৫ পয়েন্ট। এরপর সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সোমবার লেনদেনের প্রথম কয়েক মিনিটও বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়ে কেনাবেচা হয়। কিন্তু এরপর দর ক্রমাগত কমতে থাকলে দুপুর ২টায় ১০০ পয়েন্ট হারিয়ে ডিএসইএক্স সূচক ৪ হাজার ১১১ পয়েন্টে নেমে যায়। লেনদেনের শেষ আধা ঘণ্টায় কিছু শেয়ারের দরপতন কিছুটা কমে আসলে সূচক ৮৮ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ১২৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে থামে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও সোমবার দরপতনের চিত্রটা ছিল প্রায় একই রকম। এই স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন ২৫২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২৮টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয় ২০৬টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ১৮টির দর। এ দরপতনে সিএসইর প্রধান মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ১৪৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯১ শতাংশ হারিয়ে ৭ হাজার ৬১৩ পয়েন্টের নিচে নেমেছে।
বেশিরভাগ শেয়ার দর হারালেও সোমবার ডিএসইতে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এই স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন মোট ২৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা রোববারের তুলনায় প্রায় ২৬ কোটি টাকা বেশি। তবে এদিন সিএসইর লেনদেন সোয়া ২ কোটি টাকা কমে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় নেমেছে।
দরপতনের কারণ সম্পর্কে বাজারসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জানায়, ব্যাংকের সুদহার আগামী এপ্রিল থেকে ‘নয়-ছয়ে’ বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাংকের মুনাফায় ধস নামবে- এমন ধারণা থেকে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন, যা দরপতনকে উস্কে দিচ্ছে।
দরপতনের মধ্যে লেনদেন কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাখ্যায় ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, অনেকে আরও বড় দরপতনের আশঙ্কা থেকে যে দাম পেয়েছেন, সে দামেই শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ কারণেই লেনদেন বেড়েছে।
তাছাড়া প্রায় ধসে রূপে নেওয়া দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগই নেই। সম্প্রতি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে। তবে ওই কমিটি কোনো কাজ করছে বলে জানা যায়নি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারবাজারে ধসের ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ আতঙ্ক কাটানোর কোনো ব্যবস্থা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।