বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আশার আলো ঝিকরগাছা স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে উঠা একটি স্কুল

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সৃষ্টিশীল ও কর্মক্ষম করতে যশোরের ঝিকরগাছায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠা একটি স্কুল ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। অন্য দশটি শিশুর মতোই আদর-যতেœ বেড়ে উঠেছে এই প্রতিষ্ঠানের শিশুরা। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানটিতে চারশ’রও বেশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু লেখাপড়ার পাশাপাশি পূনর্বাসনের সুযোগ পেয়েছে। মাত্র ৫ মাস আগেও ঝিকরগাছার রঘুরামপুরের বাবর আলী সরদার বিশেষ প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক এই বিদ্যালয়ের ছোট্ট টিনের চালার ঘর ছিলো। অথচ এখন সেখানে আধুনিক একাডেমিক ভবনসহ গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা। ২০১৪ সালে এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম বাবর আলী সরদারের নামে তার সন্তানেরা এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠার শুরুতে মাত্র ১০ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু নিয়ে শুরু করলেও এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো। সম্পূর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানটি শত শত প্রতিবন্ধী শিশুদের চোখে এখন আশা আলোর ফুটে উঠেছে। স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও মরহুম বাবর আলীর ছেলে আব্দুল আলিম বলেন, জেলার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা ও আশপাশ এলাকায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী। বিভিন্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা অনেকটা অযতেœ অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের অভাবে তারা মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। এসব দিক বিবেচনা করে বাবার আত্মার মাগফিরাতের অংশ হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগী হই। স্ত্রীর নামে ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে দান করে দেই। এরপর ছোট্ট একটা চালা ঘরে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করি। স্কুলটিকে দাঁড় করাতে গিয়ে নিজের অর্থ শ্রম ব্যয় করে এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রতিবন্ধী শিশুদের সংগ্রহ করে স্কুলে ভর্তি করানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়। এসব শিশুদের যাতায়াত, টিফিন, বই-খাতাসহ যাবতীয় সুবিধা দিতে থাকি। এক পর্যায়ে অল্প দিনের মধ্যে এলাকার লোকজনের মধ্যে স্কুলটি ব্যাপক সাড়া ফেলে।
৯ টি কক্ষ বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনে শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশের জন্য খেলাধূলা ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা জায়গা রাখা হয়েছে। এসব অধিকার বঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুদের সঠিক পরিচর্যা দিয়ে স্বাভাবিক করে তুলতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন ১৮ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি, শরীরচর্চার পাশপাশি সাংস্কৃতিক খেলাধূলায় পারদর্শী করে তুলছেন তারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে আমরা যারা শিক্ষাগতা করি তাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও বিনা বেতনে এখানে সেবা করছেন। এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের জন্য আলাদা পরিবহন রয়েছে। শিশুদেরকে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলায় পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে। ২০১৯ সালে আবুধাবিতে বিশেষ অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহন করে এই স্কুলের দুই শিক্ষার্থী পদক পেয়েছেন বলে জানান তিনি। স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সাহিদা খাতুন। জন্ম থেকে তার দুই পা নেই। যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে মাস্টার্স ও অনার্স শেষ করেছেন । তিনি বর্তমানে ওই স্কুলের প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় খুশি অবিভাবক ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা। সাবিনা ইয়াসমিন নামে একজন বিশেষ সুবিধা বঞ্চিত শিশুর মা বলেন, আমার সন্তান আগে বাড়িতে অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকতো। এখন এ স্কুলটি হওয়াতে অনেক সুবিধা হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অহিদুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন স্কুল গড়ে তোলা খুবই কঠিন ব্যাপার। আমরা সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে যে অবস্থা দেখেছি তাতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। স্কুলটি দ্রুত যাতে এমপিওভূক্ত হয় সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানান।