কীভাবে বিধ্বস্ত ইউক্রেনীয় বিমান, বাহাস

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ভুল করে বুধবার ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত করেছে ইরান। এমনটা দাবি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোও মার্কিন দাবিকে সমর্থন দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে ইরানের হামলায় বিমানটি ধ্বংস হয়েছে বলে একমত পোষণ করেছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও। তবে ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইরান একে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বলেছে, বৈজ্ঞানিকভাবে মিসাইল হামলার দাবি অসম্ভব। যান্ত্রিক গোলযোগেই যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তার প্রমাণ রয়েছে ইরানের কাছে। তেহরানে বিধ্বস্ত হওয়া ওই বিমানে অবস্থানরত ১৭৬ জন আরোহীই নিহত হয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ওই বিমান ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। একাধিক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এ খবর দিয়েছে সিবিএস। অপরদিকে মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক পেন্টাগন, মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র ও ইরাকি গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে একই খবর দিয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউক্রেন আগে জানিয়েছিল যে, বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তবে ইরান তখন এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই ওই যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা স্যাটেলাইট দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও পরে একটি বিস্ফোরণ শনাক্ত করতে পেরেছিল।
অপরদিকে নিউজউইককে তিন ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের ধারণা রাশিয়ার তৈরি টর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় ওই বিমান। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। কেউ হয়তো ভুলও করে থাকতে পারে। ৩রা জানুয়ারি ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। এরপর ওই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইরান বিমানের ব্ল্যাকবক্স বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িং বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। বৈশ্বিক বিমান আইন অনুযায়ী, এই তদন্তে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার ইরানের। তবে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও সাধারণত তদন্তে সম্পৃক্ত থাকে।
জাস্টিন ট্রুডোর বিবৃতি
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও বলছেন, তার ধারণা বিমানটি ইরানি মিসাইলের আঘাতেই বিধ্বস্ত হয়েছে। এ নিয়ে তিনি শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, তিনি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে যাত্রীবাহী বিমানটি মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি অনিচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন ট্রুডো। তিনি বলেন, কানাডার মানুষের মনে বিষয়টি বিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এবং তাদের উত্তর জানা দরকার। তবে বিষয়টি নিয়ে কাউকে দোষারোপের সময় এখনো আসেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে কানাডার সঙ্গে বৃটেন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। কানাডা সফররত বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, ইরান ভ্রমণ না করার জন্য বৃটিশ নাগরিকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ইরান যা বলছে
ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। দেশটির সরকারের মুখপাত্র আলী রাবিয়ি শুক্রবার এ নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান সংস্থা বা আইসিএও’র আইনের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে যা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে ও দ্রুত তদন্ত কাজ চালাবে এবং তাতে সংশ্লিষ্ট সব দেশের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এতে ইউক্রেনের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি মার্কিন বোয়িং কোম্পানির কর্মকর্তাদেরও যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বর্তমানে ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদল ইরানে অবস্থান করছে। এর পাশাপাশি বিমানের ব্ল্যাকবক্স পরীক্ষা করার জন্য তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে বিমানের নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আলী রাবিয়ি আরো বলেন, যেসব দেশের নাগরিক এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সেসব দেশের প্রতিনিধিও তদন্ত কমিটিতে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির নির্দেশমতো তদন্তের ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া, ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার প্রধান আলী আবেদজাদেহ বলেন, বিমানটি যখন বিমানবন্দর এলাকা ছেড়ে যাচ্ছিল তখন সেটি পশ্চিমমুখী ছিল। একটি সমস্যার কারণে সেটি ডান দিকে মোড় নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে পুনরায় ফিরে আসছিল তখন সেটি বিধ্বস্ত হয়। তিনি বলেন, বিমানটি বিধ্বস্ত হবার আগে আগুন জ্বলতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইমাম খোমেনি বিমানবন্দরে ফিরে আসার আগে বিমানের পাইলট সাহায্য চেয়ে কোনো বার্তা পাঠাননি। মিসাইল হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই সম্ভব নয়। এটি একটি গুজব।