সরকারি স্কুলে ভর্তির প্রস্তাব নাকচ : লিতুন জিরার বাড়িতে গিয়ে ইউএনওর দুঃখ প্রকাশ

0

স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর (যশোর)॥ যশোরের মনিরামপুরে হাত-পা বিহীন জন্ম নেয়া মেধাবী লিতুন জিরা ও তার অভিভাবকদের সাথে অসদাচরণের খবরে উপজেলা প্রশাসনসহ এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার লিতুনদের বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সমবেদনা জানান। এ সময় তারা লিতুনকে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তাব দেন। তবে লিতুন ও তার বাবা-মা এ প্রস্তাব প্রত্যখ্যান করে জানান, তাদের দাবি ওই প্রধান শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। তবে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী জানান, অসদাচরণের জন্য প্রধান শিক্ষককে ইতিমধ্যে তিরষ্কার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের প্রভাষক হাবিবুর রহমানের মেয়ে লিতুনজিরা মুখে ভর দিয়ে লিখে এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। অদম্য মেধাবি লিতুন জিরার প্রবল ইচ্ছা ছিল মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ার। ২৩ ডিসেম্বর মা-বাবার সাথে হুইল চেয়ারে করে লিতুন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসে সে। লিতুনের সিট পড়ে দোতলার একটি কক্ষে। পিতা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হবে বিধায় তারা প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীকে অনুরোধ করেন নিচের যেকোন কক্ষে লিতুনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। এ অনুরোধ করতেই প্রধান শিক্ষক তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। এক পর্যায় প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী লিতুনের সামনে তার মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিবন্ধী মেয়েকে কোলে নিয়ে বস্তাভর্তি ধান যদি নাড়াচাড়া করা যায়, তাহলে তাকে নিয়ে উপরে উঠতে সমস্যা কোথায়? পঙ্গু মেয়ের জন্য পৃথক কক্ষে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণে লিতুন ও তার বাবা-মা হতবাক হয়ে অঝরে কাঁদতে থাকেন। লিতুনের পিতা জানান, কোন উপায়ন্ত না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারা দুজনে মিলে কষ্ট করে লিতুনকে দোতলায় পরীক্ষার কক্ষে বসিয়ে দেন। পরীক্ষা অংশ নিয়ে লিতুন মেধার স্বাক্ষরও রাখে। সে কৃতিত্বের সাথে ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ন হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসদাচরনের প্রতিবাদে লিতুনজিরা সরকারি স্কুলে ভর্তি না হয়ে উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে ১ জানুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।