ফের ধর্ষণ, ফের বিক্ষোভ

0

রবিবার রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলায় ধর্ষিত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী যদি সন্ধ্যাবেলায় এভাবে ধর্ষিত হন তাহলে রাজধানীর পথেঘাটে নারীর নিরাপত্তা কতটুকু? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় তোলা এ ঘটনার দ্রুতবিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন শিার্থী-শিক-অভিভাবকসহ সচেতন নাগরিকরা।
মানবাধিকার ও নারীআন্দোলন কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, বিচার না হওয়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ। সাম্প্রতিক নানা পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ধর্ষণ বন্ধ হওয়া তো দূরের কথা বরং দেশে ধর্ষণ দিন দিন বাড়ছেই। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের-আসক সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আসকের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে দেশে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৭৩২ নারী। একইসঙ্গে নারীদের উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানির ঘটনাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে উত্ত্যক্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১৮ নারী। আরও উদ্বেগজনক যে, শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাও বেড়েছে। ২০১৯-এ শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর মোট ৪৮৭ শিশু নিহত হয়েছে। আগের বছর নিহত হয় ৪১৯ শিশু।
বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলো, দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলা নিষ্পত্তির হার খুবই কম। বেসরকারি সংস্থা নারীপরে এক কেইসস্টাডি থেকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা, ঝিনাইদহ, জামালপুর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলায় ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭২টি, কিন্তু এসব মামলায় সাজা হয়েছে মাত্র ৫ জনের। পুরো দেশে এমন লাখ লাখ মামলা নিষ্পত্তিহীন রয়ে গেছে। গত বছরের জুলাই মাসে হাইকোর্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করাসহ ওই সাত দফা নির্দেশনাতেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দেশে সামগ্রিকভাবে শিা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক েেত্র মেয়েদের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান হলেও অগ্রগতির এই চিত্রকে মøান করে দিচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যার বর্বরতা। তবে, হতাশার মধ্যেও আশাব্যঞ্জক খবর হচ্ছে, সামাজিক পরিসরে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ-বিােভের পাশাপাশি নির্যাতন প্রতিরোধের ঘটনাও বাড়ছে। সম্প্রতি নুসরাত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। এ পথ ধরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করা হবে সেটাই প্রত্যাশা।