৬ বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি তদন্তকারীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ গোপীবাগে কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুকী ও তার ছেলেসহ ছয় জনকে গলা কেটে হত্যা ঘটনায় ৬ বছরেও চার্জশিট দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি থানা পুলিশ থেকে ডিবি এরপর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে আসে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। একজনের স্বীকারোক্তি মতে এখনো অধরা রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির চার সদস্য। তদন্তকারীদের ভাষ্য, কথিত পীর খিজির খান হত্যার সঙ্গে জড়িত জেএমবি’র আট সদস্যের টিমের সঙ্গে গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের সংশ্লিষ্টতা আছে। এছাড়া হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত হাদিসুর রহমান সাগর ও মামুনুর রশিদ রিপনের সঙ্গে সিক্স মার্ডারের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এ কারণে সাগর ও রিপনকেও সিক্স মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর গোপীবাগের আর কে মিশন রোডে ৬৪/৬ নম্বর আয়না বাড়ির দোতলায় কথিত ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি পরিচয় দানকারী লুৎফর রহমান ফারুক (৬০), তার ছেলে মনির হোসেন (৩০), মুরিদ সাইদুর রহমান (৩০), মজিবর রহমান (৩২), রাসেল (৩০) ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জুকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আবদুলাহ আল ফারুক বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনায় দায় স্বীকার করে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির সদস্য তরিকুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেন। তিনি জবানবন্দিতে জানান যে, জেএমবির শীর্ষ নেতারাই এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তের প্রধান সমন্বয়কারী ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ডিসি জানান, ‘মামলার চার্জশিট এখনো আদালতে দেয়া হয়নি। কবে নাগাদ চার্জশিট জমা দেয়া হবে তা বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, খিজির খান হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তরিকুল ইসলাম ও আব্দুল গাফফার নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তরিকুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তরিকুলের জবানবন্দি অনুযায়ি, এই হত্যাকান্ডে আটজন অংশ নেয়। মাহফুজ, রনি, জাহিদ ও আতিক নামে চার জনের নাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে। এছাড়া হলিআর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত হাদিসুর রহমান সাগর ও মামুনুর রশিদ রিপনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিহত লুৎফর নিজেকে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি ও পীর দাবি করতেন। তিনি ও তার অনুসারীরা ধর্মের প্রচলিত রীতিনীতি ও অনুশাসনের বাইরে নিজস্ব ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের চেষ্টা করতেন। ধর্ম নিয়ে ভ্রান্তরীতি প্রচার করায় পুরনো জেএমবির কিলিং স্কোয়াডের সদস্য জামাই ফারুকের পরিকল্পনায় হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় ৮ জন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জেএমবির দলটি প্রথমে লুৎফরের বাসায় ভক্ত সেজে ঢোকে। এরপর তার স্ত্রী ও পুত্রবধূকে পাশের কক্ষে আটকে রেখে ছয়জনকে হত্যা করে।
সূত্র জানায়, রহস্যঘেরা সিক্স মার্ডার নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা শুরুর দিকে একেবারেই অন্ধকারে ছিলেন। ২০১৫ সালে বাড্ডায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও পীর খিজির হায়াত খান হত্যাকান্ডের তদন্ত করতে গিয়েই মূলত সিক্স মার্ডারের রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। দুটি হত্যাকান্ড ও লুটপাটের ধরন প্রায় একই ছিল। এতে খিজির খান হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার তরিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সিক্স মার্ডারের বিষয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে সিক্স মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার দেয়া তথ্যে ভিত্তিতে জঙ্গি গাফফারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সূত্র জানায়, তরিকুলের জবানবন্দি অনুযায়ি,এই হত্যাকান্ডে আটজন অংশ নেয়। মাহফুজ, রনি, জাহিদ ও আতিক নামে চার জনের নাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে। তরিকুলের দেয়া নামগুলো জঙ্গিদের ছদ্মনাম হতে পারে। ওই চারজন ছাড়া আরও কেউ হত্যায় জড়িত থাকতে পারে। চলতি বছরের মে মাসে তদন্তকারী সংস্থা হলিআর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারীদের হাদিসুর রহমান সাগর ও মামুনুর রশীদ রিপনকে গ্রেপ্তার দেখায়। মামলার বাদী নিহতের ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক জানান, তদন্তকারীরা এখনো চার্জশিট দিতে পারেনি। কেন আমার বাবাকে খুন করা হলো তা জানতে পারলাম না।