ঘসনের পলায়ন রহস্য!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জাপান-ভিত্তিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিসানের সাবেক চেয়ারম্যান কার্লোস ঘসনকে গ্রেপ্তার করতে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারপোল। সম্প্রতি তিনি ব্যক্তিগত বিমানে করে জাপান থেকে লেবাননে পালিয়েছেন। জাপানে আর্থিক অসদচারণের মামলায় বিচারের সম্মুখীন ছিলেন তিনি। কিন্তু মামলার বিচারকার্য আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, এ তথ্য জানার পরপরই পালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এদিকে, তার পলায়ন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে নানা তথ্য, গুঞ্জন। এমন দাবিও ওঠেছে যে, বিশাল আকারের একটি বাদ্যযন্ত্রের খাপের ভেতর লুকিয়ে জাপান ত্যাগ করেছেন তিনি। যদিও তার স্ত্রী ক্যারোল এমন দাবিকে ‘কল্পনাপ্রসূত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নতুন বছরের আগ দিয়ে লেবাননে পালিয়েছেন ঘসন। তার পলায়ন নিয়ে বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আর হবেই না কেন! জাপানি কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারিতে ছিলেন তিনি। নিজের বাড়ি ছেড়ে দুই রাত অন্য কোথাও কাটাতে হলেও আদালতের অনুমতি দরকার ছিল তার। সেই তিনি আচমকা এক রাতের আড়ালে বিমানে চড়ে তুরস্ক হয়ে লেবানন চলে গেলেন।
গণমাধ্যম অনুসারে, ব্যক্তিগত বিমান দিয়ে প্রথমে ইস্তাম্বুল ও পরে সেখান থেকে লেবানন যান তিনি। তার পলায়ন নিয়ে তুরস্কেও তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুর্কি পুলিশ। এর মধ্যে চার জন পাইলট, একজন কোম্পানি কার্গো ম্যানেজার ও দুজন বিমানবন্দর কর্মকর্তা রয়েছেন।
লেবাননে পৌঁছে দেয়া এক বিবৃতিতে ঘসন বলেন, আমি ন্যায় বিচার থেকে পালাইনি। আমি অন্যায় ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে পালিয়েছে। আমি এখন থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে মুক্তভাবে যোগাযোগ করতে পারবো। ঘসনের পলায়নের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, তার স্ত্রী এই পলায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বৃহস্পতিবার এমন দাবি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমি একাই আমার পলায়নের ব্যবস্থা করেছি।
যেভাবে পালিয়েছেন ঘসন
তুর্কি গণমাধ্যম অনুসারে, সোমবার জাপানের ওসাকা শহরের কানসাই বিমানবন্দর থেকে ব্যক্তিগত বিমানে করে রওনা দেন ঘসন। সেখান থেকে তুরস্কে যাত্রা করেন। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৫:৩০ মিনিটে ইস্তাম্বুলের আতার্তুক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তুর্কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে নিউজ ওয়েবসাইট হুরিয়েত জানিয়েছে, তুর্কি সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানতো না যে, ওই বিমানে ঘসন আছেন।
২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে গত বছর তাকে কঠিন শর্তে জামিন দেয়া হয়। তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। বাড়ি ছেড়ে দুই রাতের বেশি সময়ের জন্য কোথাও ভ্রমণের জন্য আদালত থেকে অনুমতি নেয়া তার জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো। প্রতিনিয়ত তার বাড়ির ওপর নজরদারি রাখার নির্দেশ রয়েছে আদালতের। এছাড়া তার ফোন ও কম্পিউটারও জব্দ করে নেয়া হয়েছে। জামিনের সময় তার পাসপোর্ট তিনি নিজের আইনজীবীদের কাছে জমা দিতে বাধ্য ছিলেন। তার আইনজীবীরা জানান, ঘসনের পাসপোর্টগুলো এখনো তাদের কাছেই রয়েছে। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জাপানের অভ্যন্তরে ভ্রমণের জন্য তার কাছে চতুর্থ একটি পাসপোর্ট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ওই পাসপোর্টটিও তার আইনজীবীদের জামানতেই থাকার কথা। জাপান ছেড়ে যাওয়ার জন্য তার পাসপোর্ট ব্যবহারের কোনো রেকর্ড নেই।
বৃহস্পতিবার রয়টার্স জানিয়েছে, ঘসনের মামলার বিচারকার্য ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। এটা জানতে পারার পরই জাপান ছেড়ে পালান তিনি।
এদিকে, ঘসনকে গ্রেপ্তার করতে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারপোল। বিশ্বজুড়ে প্রত্যর্পণ, আত্মসমর্পণ থেকে পালিয়ে বেড়ানো অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে এ ধরণের নোটিশ জারি করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্টারপোলের নোটিশ পেয়েছে লেবানন কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি তারা। এ ছাড়া, জাপানের সঙ্গে লেবাননের প্রত্যর্পণ বিষয়ক কোনো চুক্তিও নেই।
লেবানন, ব্রাজিল ও ফ্রান্সের নাগরিকত্ব রয়েছে ঘসনের। লেবাননের রিয়েল এস্টেট ও ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছেন তিনি। সব বিবেচনায়, লেবানন তাকে জাপানে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে, ফ্রান্স জানিয়েছে, ঘসন সেখানে গেলে তাকে জাপানের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।