আমাদের পরিচয় কী? RSS অফিস পর্যন্ত মিছিল শহরের রূপান্তরকামী, যৌনকর্মীদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পাচার হয়েছেন সেই কোন ছোট বয়সে। হাতবদল হতে হতে এখন শহরের এক যৌনপল্লিতে ঠাঁই হয়েছে সরস্বতীর (নাম পরিবর্তিত)। বহু কষ্টে আধার, ভোটার কার্ডটা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে দিয়েছেন, নাগরিকত্ব প্রমাণে ভোটার, আধার কার্ড চলবে না। বেঁচে থাকাটাই যেখানে চ্যালেঞ্জ, সেখানে আলাদা পরিচয়পত্র জোটাবেন কোত্থেকে, ভেবেই ঘুম উড়েছে তাঁর।
পরিচয়পত্রে নামের পাশে লিঙ্গ পরিচিতি একজন পুরুষের। কিন্তু পরিচয়পত্রধারী এখন পরেন সালোয়ার বা শাড়ি। রূপান্তরকামী সনিয়ারও ঘুম উড়েছে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা ভেবেই।
সে দুর্ভাবনা বুকে চেপেই শুক্রবার সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ সাবিত্রীবাঈ ফুলের ১৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে এই প্রথম একজোট হয়ে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নামলেন সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মহিলা, রূপান্তরকামী, ক্যুয়েররা। প্রসঙ্গত, সাবিত্রীবাঈ লিঙ্গ এবং জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধেই তাঁর প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলেন। শুক্রবার শহিদ মিনার থেকে উত্তরে আরএসএসের সদর দপ্তর কেশব ভবন পর্যন্ত সিএএ-এনআরসি, ট্রান্সজেন্ডার বিল-সহ একাধিক দাবিতে মিছিল করলেন শহরের প্রান্তিক মহিলা, কুয়্যের, রূপান্তরকামীরাও। উত্তরে বিডন স্ট্রিটে পৌঁছতেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। দুপক্ষ সেখানে কিছুটা তরজাতেও জড়ান বলে অভিযোগ।
মিছিলের অন্যতম আহ্বায়ক নারীবাদী সংগঠন মৈত্রীর তরফে সমাজকর্মী রত্নাবলি রায় বলেন, ‘নাগরিকত্ব বিলে প্রান্তিক এই মানুষগুলির কথা বলা হয়নি। যাঁরা ছোটবেলায় পাচার হয়েছেন কিংবা যাঁদের জীবনের অনেকটা সময় কাটছে মানসিক হাসপাতালের ভিতরে, তাঁরা কী ভাবে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেন? শুক্রবারের তাই রাজপথে নামলেন তাঁরা।’
শুক্রবারের মিছিলে পা মেলালেন রাজ্যে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সদস্যরাও। দুর্বারের সম্পাদক কাজল বোস বলেন, ‘আমাদের অনেক মেয়েকেই ঘর ছাড়তে হয়েছে বাধ্য হয়ে। কেউ বাড়ির পথ ভুলেছেন। কারও জন্য আবার বাড়িতে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকেরই কোনও কাগজ নেই। কিছু মেয়েকে আমরা অনেক চেষ্টা করে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বানিয়ে দিয়েছি। এখন সরকার যদি বলে সেগুলিও নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, তা হলে আমরা যাব কোথায়?’ শুক্রবারের মিছিলে দুর্বারের সদস্য রূপান্তরকামীরাও যোগ দেন বলে জানিয়েছেন কাজল। ‘আমাদের মতো প্রন্তিক মানুষদের ভোট নিয়ে তো মোদী সরকারে এসেছেন। তা হলে আমাদের নাগরিকত্বের প্রামাণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না কেন সেই কাগজ? আমরা এই বৈষম্যের প্রতিবাদ পথে নেমে করছি এবং ভবিষ্যতেও করব,’ ঘোষণা কাজলের।
অসমে প্রায় ২০০০ রূপান্তরকামীর নাম এনআরসির তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। নাগরিকত্ব বিলের পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে এনআরসি লাগু হওয়ার সম্ভাবনায় তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রূপান্তরকামীরাও। এলজিবিটিকিউআই সম্প্রদায়ের সদস্য এবং গবেষক অভিনব বলেন, ‘কত রূপান্তরকামী পরিবারের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসে, তাঁরা কোথায় কাগজ পাবেন? আমরা তাঁদের সবার কথা বলতেই পথে নামছি।’ কলকাতা ছাড়াও এ দিন পথে নামলেন দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, রাঁচি, মুম্বইয়ের প্রান্তিকরাও।