খুলনা পাটকল শ্রমিকদের তৃতীয় দিনের মতো অনশন, ২ জন হাসপাতালে

0

খুলনা প্রতিনিধি॥ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশনের তৃতীয় দিন (৩১ ডিসেম্বর) অতিবাহিত হচ্ছে। খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের এ অনশন চলছে চটের তৈরি ক্যাম্পে। দ্বিতীয় দফা অনশনের ৩ দিনে ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও ২৫ জনকে ক্যাম্পেই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া ২৫০ জনের প্রেসার মাপাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবিতে গত রবিবার বেলা ২টা থেকে পাটকল শ্রমিকরা আমরণ গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করছে। স্টার জুট মিলের স্বাস্থ্য সহকারী আবিদ হোসেন বলেন, ‘তার মিলের ১২ জনকে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত কাউকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তবে ১৮০ জনকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়েছে।’ খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক আবু মোস্তফা বলেন,‘তাদের ক্যাম্প থেকে গনি নামে এক শ্রমিককে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
স্টার জুট মিলের সিবিএ’র যুগ্ম সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, ‘কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে তিনি এ অনশন পালন করছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি মরতে প্রস্তুত।’ ক্রিসেন্ট জুট মিলের ফিনিশিং বিভাগের দুলাল সরদার বলেন, ‘তাদের ক্যাম্পের ১১ জনকে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। আর ৮০ জনকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়েছে।’ আলিম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু জানান, অনশন চলাকালে তাদের মিলের শ্রমিক মো. কামরুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এছাড়া ক্যাম্পের মেডিক্যাল টিম ১৭ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে।
খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পিপলস গোল চত্বর থেকে প্লাটিনাম জুট মিলের গেটের কিছুটা পর্যন্ত সড়ক বন্ধ। সড়কের ওপর তাবু টানিয়ে ও প্যান্ডেল করে অবস্থান করছেন শ্রমিকরা। সেখানে রয়েছেন খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর ও দৌলতপুর পাটকলের শ্রমিকরা। তাদের নিজ নিজ মিলের সামনেও প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। শ্রমিকদের কেউ ঘুমিয়ে পড়েছেন, আবার কেউ সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করছেন। কিছু কিছু শ্রমিক আশপাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। স্টার জুট মিলের প্যান্ডেলে থাকা মোমেনা খাতুন নামে এক শ্রমিক জানান,প্রায় আট বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ তিনি পান তা দিয়ে আর চলছে না। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হলে তাদের সংসার চালাতে খুব বেশি কষ্ট হতো না।’
অনশনস্থলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত প্রচন্ড শীত থাকে। সেই শীতে শ্রমিকরা রাস্তার ওপর রয়েছেন। আমাদের আর কোনও উপায় নেই। দাবি আদায়ে মরতে হলেও রাজি আছি। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করেই ঘরে ফিরতে চাই। ইস্টার্ন জুট মিলের প্রধান ফটকের সামনে আলিম ও ইস্টার্ন জুটমিল শ্রমিক কর্মচারীদের অনশন চলাকালে ইস্টার্ন জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন আলিম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক আ. হামিদ সরদার প্রমুখ । পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে একাত্ত্বতা প্রকাশ করে সমাবেশ করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটি। এ সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কমরেড মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি।