ভোটযুদ্ধে দুই দল

0

শাকিল আহমেদ ॥ নতুন বছরে ঢাকায় ভোটযুদ্ধে নামছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে এক হাজার প্রার্থী নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামীকালই জানা যাবে চূড়ান্ত লড়াইয়ে কারা থাকছেন। নির্বাচনে লড়তে শুধু মেয়র প্রার্থীই নয়, কাউন্সিলর পদেও দলীয় প্রার্থী সমর্থন দিয়েছে দুই দল। সরকার গঠনের পর একবছর স্বস্তিতে পার করা আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ হলেও জয় নিশ্চিত করতে মাঠে নামবেন তারা। অন্যদিকে নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করে আসা বিএনপি বলছে, নির্বাচন সুুষ্ঠু হলে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। ভোটের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে রাজধানীর মানুষ জবাব দেবে। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ছিল উৎসব মুখর। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। আগামী ১০ই জানুয়ারি প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই জমে উঠবে প্রচারণা।
নৌকা-ধানের শীষের ভোটের লড়াই। মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন পর্যন্ত দুই সিটিতে মোট মনোনয়ন ফরম বিতরণ হয় ২ হাজার ২৬০টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০টি মনোনয়ন দাখিল করা হয়েছে। আগামী ২রা জানুয়ারি দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। গতকাল মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন হওয়ায় সকাল থেকেই দলীয় সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে আসেন প্রর্থীরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর আতিকুল সাংবাদিকদের বলেন, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে তার আশা। নির্বাচনে হার-জিত আছে। কেউ যেন মাঝপথে নির্বাচন বর্জন না করেন। নির্বাচন কমিশনের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আতিকুল বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমরা পাঁচজনই এসেছি। বাইরে কোনো শোভাযাত্রা হয়নি। স্লোগান যখন হয়েছে, তখন বন্ধ করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন। তাই ভিড় হতে পারে। এদিকে বেলা সোয়া ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রাজধানীর গোপীবাগের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের হাতে মনোনয়ন জমা দেন তাপস। এসময় আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন আবদুল বাতেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাপসের সহযোগিতাও চান তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহম্মদ মন্নাফি প্রমুখ নেতারা। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাপস। তিনি বলেন, আগামী বছর থেকেই ঢাকা দক্ষিণে পরিবর্তনের সূচনা ঘটবে। এ নগরীতে অনেক কাজ বা নাগরিক সেবা বাকি আছে। নির্বাচিত হলে নাগরিকদের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। ক্রমান্বয়ে নগরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে একটি বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা হবে। একই দিন মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এসময় তিনি বলেন, সারা বিশ্ব থেকে বিশেষজ্ঞদের এনে ঢাকা শহরের উন্নয়ন করা কোনো ব্যাপারই ছিল না। গত ১২ বছরে যে অর্থ পাচার হয়েছে সেই অর্থ যদি দেশের অর্থনীতিতে থাকতো তাহলে শুধু ঢাকা নয় বাকি মেট্রোপলিটন সিটি আজ উন্নত শহর হতো। দুপুর দুইটায় উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে আসেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, একটা বিতর্কিত নির্বাচন অতীতে হয়েছে। আর বিতর্ক না বাড়িয়ে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে কিনা, এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। নির্বাচনে যত সমস্যাই আসুক, আমরা সবগুলোকে অতিক্রম করে চেষ্টা করব, এগিয়ে যেতে। শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।
দুই সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ১৮ জন প্রর্থী। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে ৩৬৭ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ১ হাজার ৮৭৫ জন প্রার্থী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৮ জন প্রার্থী। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে ১৯০ ও সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ৪৭ জন। এতে মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ২৪৫ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে হাজী মো. সেলিম ছাড়া মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৭ জন মেয়র প্রার্থী। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৯৯ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে জমা দিয়েছেন ৪৫৪ জনসহ মোট ৫৬০ জন প্রার্থী। দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন শেখ ফজলে নুর তাপস (আওয়ামী লীগ), ইশরাক হোসেন (বিএনপি), মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (জাতীয় পার্টি), হাজী মো. সেলিম (স্বতন্ত্র), আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা (বাংলাদেশ কংগ্রেস), আবদুর রহমান (ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ), মো.বাহরানে সুলতান বাহার (পিডিপি), আবাদুস সামাদ সুজন ( স্বতন্ত্র)। এদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ১০ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮২৮ জন ও সংরক্ষিত নারী আসনে ১৭৭ জন প্রর্থী। ডিএনসিসিতে মোট প্রার্থী ১ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে কাজী মো. শহীদুল্লা (গণফ্রন্ট), সালাউদ্দিন মাহমুদ (আওয়ামী লীগ), স্বাধীন আক্তার আইরিন (স্বতন্ত্র) এই তিন জন বাদে বাকি ৭ জনই তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৯ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ জনসহ মোট ৪৭০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছে। উত্তর সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন যে ১০ প্রার্থী তারা হলেন মো. আতিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), তাবিথ আউয়াল (বিএনপি), কাজী মো. শহীদুল্লাহ (গণফ্রন্ট), জিএম কামরুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি), সালাউদ্দিন মাহমুদ (স্বতন্ত্র), শেখ মো. ফজলে বারি মাসউদ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), শাহীন খান (পিডিপি) মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান (এনপিপি), আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক (বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি) ও স্বাধীন আক্তার আইরিন (স্বতন্ত্র)। ঢাকা দুই সিটিকে বিভক্তির পর প্রথমবার সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ২৮শে এপ্রিল। তখন দুই সিটি নির্বাচনে মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন ২০ জন প্রার্থী, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৩৯১ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেন। সে সময় ঢাকা দক্ষিণে মোট সংরক্ষিত ওয়ার্ড ছিলো ১৯টি ও সাধারণ ওয়ার্ড ছিলো ৫৭ টি। মোট ভোটার ছিলো ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৬ জন প্রার্থী। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৮০ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেন। সে সময় উত্তরে মোট সংরক্ষিত ওয়ার্ড ছিলো ১২ টি ও সাধারণ ওয়ার্ড ছিলো ৩৬ টি। মোট ভোটার ছিলো ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এবারই প্রথম নতুন ওয়ার্ডসহ দুই সিটিতে এক সাথে অর্ধকোটি ভোটারের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার ঢাকার দুই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৩ হাজার ১০৯ জন। মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ৪৬৯ টি ও মোট ভোটকক্ষ ১৩ হাজার ৫১৪ টি।